আল্-খ়ান্সা তুমাদ়ির বিন্তু ‘আম্র (রাঃ)
(৫৭৫ – ৬৪৫ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও
জন্মঃ
ইসলাম
পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগে মহিলা কবিদের মধ্যে অন্যতম হলেন খানসা (রাঃ)। তিনি সর্বজন বিদিত ও স্বীকৃত এক মহীয়সী নারী। তাঁর সুনিপুন কাব্যপ্রতিভাকে দেখে প্রাক্-ইসলামি যুগের অন্যতম কবি ও সমালোচক নাবিগ়াহ্ আজ়্-জ়ুবিয়ানী তাঁর কাব্যকবিতার ভূয়সী প্রশংসা
করেছিলেন। তাঁর প্রকৃত নাম তুমাদ়ির, পিতার নাম ‘আম্র বিন্ আল্-হ়ারিস। তবে তিনি আল্-খান্স নামে অধিক পরিচিত। তাঁর পিতা ‘আম্র
ও তাঁর দুই ভাই মু’আবিয়া ও স়াখ়র ছিলেন সুলাইম গোত্রের গোত্রপতি। তাঁর অপর ভাই যুহায়ের একজন অন্যতম মু’আল্লাকা কবি। নাজ্দ প্রদেশের এই সম্ভ্রান্ত পরিবারে তিনি ৫৭৩ মতান্তরে ৫৭৫ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
আল্-খ়ান্সা নামকরণের কারণঃ
আল্-খ়ান্সা শব্দের অর্থ
চ্যাপটা নাক বিশিষ্ট নারী। যেহেতু তাঁর নাকের অগ্রভাগ স্ফীত ছিল, তাই তাঁকে আল্-খ়ান্সা নামে ডাকা হতো। এই শব্দের আর একটি অর্থ নীলগাই। তাঁর চোখের সৌন্দর্য্যকে
নীলগাইয়ের চোখের সাথে তুলনা করে তাকে আল্-খ়ান্সা
উপাধিতে ভূষিত করা হয় বলে অনেকে মনে করেন।
পতিপালন ও
বিবাহঃ
বানু সুলাইমের এই সম্ভ্রান্ত
পরিবারে, এই সর্দার ঘোরানায় তিনি রাজকুমারীর মতো অত্যন্ত যত্নে লালিতপালিত হন। যৌবনে
পদার্পন করে কাব্যচর্চা ও সাহিত্য সাধনায় মনোনিবেশ করেন। তাতে তাঁর সৌন্দর্য্য আরও
দ্বিগুণ হয়ে যায়। চারিদিকে তাঁর সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।
তাঁর নামডাক শুনে হাওয়াযিন গোত্রের গোত্রপতি দুরায়েদ বিন্ আস্-সুম্মাহ্ তাঁকে বিবাহের প্রস্তাব দেন; কিন্তু কবি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে নিজ গোত্রেই স্বীয় পিতৃব্য তনয় রাওয়াহ়াহ্ বিন্ আব্দুল আযীয-কে বিয়ে করেন।
বিষাদের সুরঃ
৬১২ খ্রিস্টাব্দে হিশাম ও দুরায়েদ দু’জনে মিলে তাঁর ভাই মু’আবিয়াকে হত্যা করে। তিনি অপর ভাই সাখ্রকে প্রতিশোধ
গ্রহনে উদ্ধুদ্ধ করেন। সে দুরায়েদকে হত্যা করে ভাইয়ের প্রতিশোধ গ্রহণ করে। কিন্তু ৬১৫ খ্রিস্টাব্দে সে-ও আক্রান্ত ও নিহত হয়। সে অত্যন্ত নম্র, ভদ্র ও দানশীল ছিল।
সর্বদা খানসার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিত। তাঁর খেয়াল রাখত। তাই খানসা তাকে সবার চেয়ে
বেশি ভালোবাসতেন। সুতরাং তাঁর মৃত্যুতে খানসা প্রচুর কান্নাকাটি করেন। এমনকি অতিরিক্ত ক্রন্দনের ফলে তাঁর দৃষ্টিশক্তিও লোপ পায়। তাঁর শোকে খান্সা প্রচুর কবিতাও রচনা করেছেন।
ইসলামের ছত্রছায়ায়ঃ
মুহাম্মদ (সাঃ)–এর নবীত্বের সংবাদ পেয়ে নিজ গোত্র বানু সুলাইমের সঙ্গে নবী (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। রাসূল (সাঃ) তাঁর কবিতা খুবই পছন্দ করতেন। অধিক কাব্য চর্চার আর্জি
জানিয়ে প্রায়শই তাঁকে বলতেন—
" هيه يا خناس!"
ধৈর্য্য
ধারণ ও জীবনবাসনঃ
তাঁর ধৈর্য্য ধারণ, হৃদয়ের দৃঢ়তা ও ঈমানী দৃঢ়তার বড় প্রমাণ হল কাদেসিয়ার যুদ্ধের দিন তাঁর অবিচল
অবস্থান। চার পুত্রকেই তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণ করেন। সেই তুমুল যুদ্ধে একে
একে সকলেই শহীদ হন। সেই সংবাদ পেয়ে তিনি
শুধু এতুটুকুই বলেছিলেন—
"الحمدلله الذي
شرفني
بقتلهم,
وأرجو
من
ربي
أن
يجمعني
بهم
في
مستقر
رحمته"
(সকল প্রশংসা আল্লাহ্র। তিনিই তাঁদেরকে শাহাদতের সুযোগ দিয়ে আমাকে সম্মানিত
করেছেন। সেই মহান প্রভুর কাছে আমার আশা, তিনি আমাদের সকলকে তাঁর করুণাচ্ছাদিত স্বর্গে একত্রিত করবেন!)
কবি খ়ান্সা দীর্ঘ জীবনযাপনের পর তৃতীয় খলিফা উসমান (রাঃ)–এর খেলাফতের সূচনালগ্নে ২৪ হিজরি মোতাবেক ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে ৭১ বছর বয়সে নাজ্দ প্রদেশে ইহলোক ত্যাগ করেন।
কাব্য প্রতিভাঃ
জাহেলী ও
মুখাদ়রাম কবিকুলের মধ্যে তিনি অন্যতম। ভ্রাতৃদ্বয় প্রয়াণের পর তিনি বিশেষ
ভাবে কাব্যচর্চা আরম্ভ করেন। তাঁর কাব্য-নৈপুন্যে মুগ্ধ হয়ে নাবিগ়াহ্ আজ়্-জ়ুবিয়ানী বলেছিলেন—
"الخنساء أشعر
الجن
والإنس"
(খ়ান্সা হচ্ছেন জীন ও মানবজাতির মধ্যে
সবচেয়ে বড় কবি।)
তাঁর কাব্যকবিতায় জাহেলী যুগের ছাপ
স্পষ্ট। তাঁর কাব্যচর্চায় ইসলামের তেমন প্রভাব লক্ষ করা যায় না। তাঁর কবিতাগুলির অধিকাংশই গৌরব ও শোকগাথা মূলক। তাঁর পিতা ও ভ্রাতৃদ্বয় গোত্রপতি ও
উৎকৃষ্ট হওয়ায় তাঁর এক কবিতায় তিনি গর্ব করে বলেছেন—
جززنا
نواصي
فرسانها وكانوا
يظنون
أن
لا
تجزا
তিনি ভাই স়াখ়রকে খুবই ভালোবাসতেন। তাই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে ক্রন্দন করে
বলেছিলেন—
أعيني جودا و لاتجمدا الا تبكيان لصخرالندى
ছোট পরিসরে বিপুল অর্থবহ একটি কবিতা। অসংখ্য ধন্যবাদ কবিকে...
ReplyDelete