Monday 22 February 2016

আবু নুওয়াস হ়াসান বিন হানী

বু নুওয়াস হ়াসান বিন হানী  
(৭৬২ – ৮১ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ
মুসলিম সভ্যতার স্বর্নযুগ আব্বাসীয় শাসনামলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এই যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বহু মনিষি জ্ঞান চর্চা করেন। ঠিক তেমনিভাবে আরবী সাহিত্য চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন আবু তাম্মাম, আবু নুওয়াস, আল-বুহতরী প্রমুখগণ। তাদের মধ্যে আবু নুওয়াস অন্যতমতিনি এই যুগের প্রথম স্তরের শ্রেষ্ঠ কবি প্রকৃত নাম হ়াসান। উপনাম আবু আলী। তবে তিনি আবু নুওয়াস নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। পিতার নাম হানী বিন আব্দুল আউওয়াল। মাতার নাম জালবান। তিনি তদানীন্তন ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমে খুযিস্তানের আহ্‌ওয়ায নামক স্থানে ১৪৫ হিজরি মোতাবেক৬২ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা শেষ উমাইয়া খলীফা দ্বিতীয় মারওয়ানের সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন।     
 
শৈশব ও শিক্ষাঃ
কবি তাঁর শৈশব বেলাটা নিজ জন্মভিটে আহওয়াযেই অতিবাহিত করেন। পিতার মৃত্যুর পরে ছয় বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে বাসরা গমন করেন। দৈন্য দশা হতে মুক্তি পেতে মায়ের পরামর্শে এক আতর ব্যবসায়ীর দোকানে সামান্য বেতনে কাজ শুরু করেন। শিক্ষার প্রতি খুবই আগ্রহী ছিলেন। তাই সুযোগ পেলেই কবিসাহিত্যিকদের নিকট উপস্থিত হতেন। এমনিভাবে একদিন তিনি প্রসিদ্ধ কবি ওয়ালেবার সাক্ষাৎ পান আর কুফায় এসে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। অতঃপর আবু যায়েদ ও আবু উবাইদাহ প্রমুখ সাহিত্যিকদের সান্নিধ্য লাভ করে কবিতা রচনায় পারদর্শী হয়ে উঠেন। বিশুদ্ধ আরবি রপ্ত করার জন্য কিছু দিন মরুভূমিতেও অতিবাহিত করেন।
 
কর্মজীবনঃ
৩০ বছর বয়সে বাগদাদে পৌঁছলে চতুর্দিকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। খলীফা হারুন তাঁকে নিজ দরবারে স্থান দেন। অল্পদিনেই দু’জনে পরম বন্ধু হয়ে যান। এমন সময় কবি জানান নামক খলীফার এক বাদীর প্রেমে পড়েন। তাঁর রহস্যপ্রিয়তা, উপস্থিত বুদ্ধির জন্য খলীফা তাঁকে খুব স্নেহ করতেন। তা সত্ত্বেও ইসলাম বিরোধী কবিতা রচনা, ধর্মীয় রীতি অমান্য ও মদ্যপান ইত্যাদি কারণে বেশ কয়েকবার তাঁকে কারারুদ্ধ করেন।
 
চরিত্র ও মৃত্যুঃ
তিনি ছিলেন উজ্জ্বল লাবণ্যময়ী মিষ্টভাষী দয়ালু সুললিত কণ্ঠ বিশিষ্ট এক বাগ্মী কবি। তাঁর ব্যবহারে ছিল নির্মলতা। তবে ধর্মীয় বিষয়ে তিনি ছিলেন খুবই শিথিল। মামুনের বাগদাদ প্রবেশের পূর্বে ১৯ হিজরি ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু বরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর স্থান সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে।
 
তাঁর সাহিত্য ও কবিতাঃ
তিনি ত্যাগ অপেক্ষা ভোগকে অধিক গুরুত্ব দিতেন। বিলাস বৈভব তাঁর কাব্যে বিদ্যমান। বিলাসের অন্যতম সামগ্রী মদকে তিনি বিভিন্নভাবে প্রশংসা ও বর্ণনা করেছেন। তাই তাঁকে “শায়েরুল্‌ খাম্‌রিয়্যাত” (মাদক কবি) বলা হয়। তাঁর কবিতায় ইসলাম বিরোধী ও কুরুচিপূর্ণ বহু বিষয় আলোচিত হয়েছে। তিনিই সর্বপ্রথম আরবি সাহিত্যে সুন্দরী নারীদের পরিবর্তে সুন্দর ছেলেদের নিয়ে পদ্য রচনা করেন। তিনি দ্বন্দ্বমূলক, প্রশংসাগাথা, শোকগাথা, বিরাগমূলক, ব্যঙ্গাত্মক মদ সম্পর্কিত, প্রেমমূলক ইত্যাদি সকল বিষয়ে কবিতা রচনা করেছেন।
 
সমকালীন কবিদের মধ্যে তাঁর অবস্থানঃ
আব্বাসি যুগের এই দিকপাল কবি জুরজী যাইদানের মতে আবৃতির ধরণে ও অর্থের প্রশস্ততায় সমকালীন কবিদের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন। তাঁর সম্পর্কে যাইয়াত বলেছেন— তিনি ভাষার লালিত্যে, চরনের চয়নে, ভাবের মাধুর্যে, অধ্যায় রচনায় অবিস্মরণীয় কৃতিত্ব প্রদর্শন করে সমসাময়িক কবিদের মধ্যে প্রাধান্য লাভ করেন।” কবি আবু নুওয়াস মরণাপন্ন অবস্থায় বলেছিলেন
اِلهِي لَسْتُ لِلْفِرْدَوْسِ اَهلاً     وَلاَ اَقْوَي عَلَي النَّارِ الْجَحِيْمِ
فَهَبْ لِي تَوْبَةً وَاغْفِرْ ذُنُوْبِي     فَاِنَّكَ غَافِرُ الذَنْبِ الْعَظِيْمِ
মদকে গুরুত্ব দিয়ে মাদকাসক্ত এই কবি বলেছেন 
دع المساجد للــعباد تسكنها    وطف بنا حول خمار ليسقينا
ما قال ربك ويل للذين سكروا     ولكن قال ويل للمـصلينا
নিজ অনুশোচনামূলক একটি কবিতায় তিনি বলেছেন
يا رب إن عظمـت ذنوبي كثرةً    فلقـد علمتُ بأن عفوك أعظمُ
إن كان لا يرجوك الا محسنٌ    فبمن يـلوذ ويستجيـر المجرمُ

 

 

 

 

 

 

 

1 comment: