Wednesday 20 February 2019

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৭৯) সূরাতু আন্‌-নাযি‘আত (উৎপাটনকারী)



৭৯) সূরাতু আন্‌-নাযি‘আত (উৎপাটনকারী)   
মক্কায় অবতীর্ণ, আয়াত ৪৬, রুকু’ ২  

 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহ্‌র নামে, যিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু (শুরু করছি)।

وَالنَّازِعَاتِ غَرْقًا

শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা ডুব দিয়ে নির্মম ভাবে (অবিশ্বাসী ও অবাধ্যদের আত্মা) উৎপাটন করে

وَالنَّاشِطَاتِ نَشْطًا

শপথ সেই ফেরেশতাদের যারা মৃদু স্পর্শে (বিশ্বাসী ও সৎ লোকেদের আত্মা) বের করে নিয়ে যায়,  

وَالسَّابِحَاتِ سَبْحًا

শপথ সেই ফেরেশতাদের (বা জ্যোতিষ্কসমূহের) যারা (নিজ কক্ষপথে) দ্রুত গতিতে সন্তরণ করে,

فَالسَّابِقَاتِ سَبْقًا

অতঃপর শপথ সেই ফেরেশতাদের (বা নক্ষত্রসমূহের বা ঘোড়াগুলির) যারা দ্রুত গতিতে অগ্রসর হয় যেন কোনো প্রতিযোগিতায় নেমেছে,

فَالْمُدَبِّرَاتِ أَمْرًا

এবং সেই ফেরেশতাদের যারা (নিজ পালনকর্তার) সকল আদেশ ও কর্ম নির্বাহ করে, (অবশ্যই প্রলয় সংঘটিত হবে এবং সকলের কর্মের হিসেব নেওয়া হবে);

يَوْمَ تَرْجُفُ الرَّاجِفَةُ

সেদিন (যখন শিঙায় প্রথম ফুঁৎকার দেওয়া হবে) পৃথিবী ও পর্বতমালা তীব্র ভাবে প্রকম্পিত হবে (এবং সকল প্রাণীই মৃত্যু বরণ করবে)।

تَتْبَعُهَا الرَّادِفَةُ

তারপরে (যখন শিঙায় দ্বিতীয় ফুঁৎকার দেওয়া হবে) পৃথিবী আবারও তীব্র ভাবে প্রকম্পিত হবে (এবং সকল প্রাণী পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠবে)।

قُلُوبٌ يَوْمَئِذٍ وَاجِفَةٌ

সেদিন বহু হৃদয় ভীত ও বিহ্বল হবে।

أَبْصَارُهَا خَاشِعَةٌ

তাদের দৃষ্টি নত হয়ে থাকবে।

يَقُولُونَ أَئِنَّا لَمَرْدُودُونَ فِي الْحَافِرَةِ

কিন্তু (যখনই তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার বিষয়ে বলা হয়) তারা বলে— আমরা কি সতিই (আমাদের জীবনের) পূর্বাবস্থায় প্রত্যাবর্তিত হবো?

أَئِذَا كُنَّا عِظَامًا نَّخِرَةً

গলিত অস্থিতে পরিণত হওয়ার পরেও?

قَالُوا تِلْكَ إِذًا كَرَّةٌ خَاسِرَةٌ

তারা আরও বলে— তা-ই যদি হয়, তবে তো এই প্রত্যাবর্তন বড়ই সর্বনাশা হবে!

فَإِنَّمَا هِيَ زَجْرَةٌ وَاحِدَةٌ

কিন্তু, এটা তো কেবল একটা তীব্র নিনাদ (দ্বিতীয় ফুঁৎকারের)।            

فَإِذَا هُم بِالسَّاهِرَةِ

অতঃপর (সেদিন) যখন তারা চোখ তুলে তাকাবে, নিজেদেরকে (ভূপৃষ্ঠের এক) প্রশস্ত ময়দানে আবির্ভূত ও পুনরুজ্জীবিত অবস্থায় পাবে।

هَلْ أتَاكَ حَدِيثُ مُوسَى

(হে মুহাম্মদ সাঃ!) তোমার কাছে কি মূসা (আঃ)-এর বৃত্তান্ত পৌঁছেছে?

إِذْ نَادَاهُ رَبُّهُ بِالْوَادِ الْمُقَدَّسِ طُوًى

যখন তার পালনকর্তা তাকে পবিত্র ত়ুয়া উপত্যকায় আহ্বান করেছিলেন,

اذْهَبْ إِلَى فِرْعَوْنَ إِنَّهُ طَغَى

(ডেকে তাকে আদেশ করেছিলেন, হে মুসা আঃ!) তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, নিশ্চয় সে (অবাধ্যতা, পাপাচারিতা, পৌত্তলিকতা ও অবিশ্বাস সবক্ষেত্রেই) সীমালংঘন করেছে।

فَقُلْ هَل لَّكَ إِلَى أَن تَزَكَّى

এবং (তাকে) বলো, তুমি (অবাধ্যতা ও অবিশ্বাসের পাপ থেকে) নিজেকে মুক্ত ও পবিত্র করবে কি?

وَأَهْدِيَكَ إِلَى رَبِّكَ فَتَخْشَى

(যদি করতে চাও,) তাহলে আমি তোমাকে তোমার পালনকর্তার দিকে পথ দেখাবো; এবং (তোমার প্রথম কাজ হবে) তুমি তাঁকে ভয় করো।

فَأَرَاهُ الْآيَةَ الْكُبْرَى

অতঃপর মূসা (আঃ) তাকে মহা নিদর্শন (স্বরূপ কিছু অলৌকিক জিনিস) দেখালেন।  

فَكَذَّبَ وَعَصَى

কিন্তু ফারাও মিথ্যারোপ করল এবং অমান্য করল।

ثُمَّ أَدْبَرَ يَسْعَى

অতঃপর পিছনে ফিরে পূর্বের কর্মে (অর্থাৎ অবিশ্বাস ও অবাধ্যতার পথে) নিয়োজিত থাকলো।

فَحَشَرَ فَنَادَى

এবং সকলকে সমবেত করে সজোরে ঘোষণা করলো,

فَقَالَ أَنَا رَبُّكُمُ الْأَعْلَى

বলল— আমিই তোমাদের সর্বোচ্চ পালনকর্তা।

فَأَخَذَهُ اللَّهُ نَكَالَ الْآخِرَةِ وَالْأُولَى

অতঃপর (তার এই চরম সীমালঙ্ঘনের কারণে) আল্লাহ তাকে পরকালের ও ইহকালের কঠিন শাস্তিতে আবদ্ধ করলেন।

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِّمَن يَخْشَى

নিঃসন্দেহে এতে বহু শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে তাদের জন্য যারা (আল্লাহ্‌কে) ভয় করে।

أَأَنتُمْ أَشَدُّ خَلْقًا أَمِ السَّمَاء بَنَاهَا

(তোমরা যারা অস্বীকার করছো তোমরাই বলো,) তোমাদের সৃষ্টি অধিক কঠিন না এই যে আকাশ তিনি নির্মাণ করেছেন তার সৃষ্টি?

رَفَعَ سَمْكَهَا فَسَوَّاهَا

তিনিই এই আকাশকে উঁচু ও সুবিন্যস্ত করেছেন।

وَأَغْطَشَ لَيْلَهَا وَأَخْرَجَ ضُحَاهَا

এবং এর রাতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেছেন আর এর পূর্বাহ্ণকে প্রকাশ করেছেন সূর্যালোকে।

وَالْأَرْضَ بَعْدَ ذَلِكَ دَحَاهَا

তারপরে পৃথিবীকে বিস্তৃত করেছেন।

أَخْرَجَ مِنْهَا مَاءهَا وَمَرْعَاهَا

অতঃপর ভূগর্ভ থেকে জল ও নানা ধরণের উদ্ভিদ নির্গত করেছেন, 

وَالْجِبَالَ أَرْسَاهَا

এবং পর্বতমালাকে দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন,

مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِأَنْعَامِكُمْ

তোমাদের ও তোমাদের চতুস্পদ জন্তুদের জন্য জীবনোপকরণ রূপে।

فَإِذَا جَاءتِ الطَّامَّةُ الْكُبْرَى

অতঃপর যখন মহা সংকট (অর্থাৎ কেয়ামত) এসে যাবে;

يَوْمَ يَتَذَكَّرُ الْإِنسَانُ مَا سَعَى

যে দিন মানুষ নিজ কৃতকর্ম স্মরণ করবে,

وَبُرِّزَتِ الْجَحِيمُ لِمَن يَرَى

এবং সকল দৃশ্যমান (বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী) ব্যক্তির জন্য জাহান্নামকে সম্পূর্ণ রূপে প্রকাশ করা হবে,

فَأَمَّا مَن طَغَى

সেদিন, যে ব্যক্তি (অবিশ্বাস, অত্যাচার, অসৎ কর্ম ও অবাধ্যতায়) সীমা লংঘন করেছে,

وَآثَرَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا

এবং পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দিয়েছে,

فَإِنَّ الْجَحِيمَ هِيَ الْمَأْوَى

তার ঠিকানা হবে জাহান্নাম।

وَأَمَّا مَنْ خَافَ مَقَامَ رَبِّهِ وَنَهَى النَّفْسَ عَنِ الْهَوَى

পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি নিজ পালনকর্তার সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করেছে এবং খেয়ালখুশী মতো আচরণ করা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রেখেছে,

فَإِنَّ الْجَنَّةَ هِيَ الْمَأْوَى

তার ঠিকানা হবে জান্নাত।

يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا

(হে মুহাম্মদ সাঃ) তারা তোমাকে কেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, কবে তা সংঘটিত হবে?

فِيمَ أَنتَ مِن ذِكْرَاهَا

(কেয়ামত কবে হবে?) এ বিষয়ে তোমার তো কোনো ধারণা নেই (তাই এ বিষয়ে কিছুই বলার দরকার নেই),

إِلَى رَبِّكَ مُنتَهَاهَا

এ বিষয়ে চরম ও পূর্ণ জ্ঞান শুধু তোমার পালনকর্তার কাছে রয়েছে।

إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرُ مَن يَخْشَاهَا

তোমার কাজ কেবল তাদেরকে সতর্ক করা যারা কেয়ামতকে ভয় করে।

كَأَنَّهُمْ يَوْمَ يَرَوْنَهَا لَمْ يَلْبَثُوا إِلَّا عَشِيَّةً أَوْ ضُحَاهَا

যেদিন তারা এই মহা প্রলয় (ও তারা বিভীষিকা স্বচক্ষে) দেখবে, সেদিন তাদের মনে হবে, তারা যেন পৃথিবীতে কেবলমাত্র একটা সন্ধ্যা অথবা একটা সকাল যাপন করেছে।

ভাবানুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment