Tuesday 11 June 2019

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ আরোগ্য



আরোগ্য
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

জোরসে বোলো জয় শ্রী রাম। আওর জোরসে...” রামনবমীর মিছিলের মাঝে একটা লরির ওপর একদল যুবকের সাথে পাগলের মতো চিৎকার করছিল মহেশ্বর। হঠাৎ জোরে ব্রেক করল ম্যাটাডোরটি। টাল সামলাতে না পেরে লরি থেকে ছিটকে নীচে পড়ে গেল। মাথায় গভীর আঘাত লাগায় কিছুক্ষণের মধ্যে অজ্ঞান হয়ে গেল সেআশেপাশের কয়েকজন ছুটে আসল তৎক্ষণাৎ। তড়িঘড়ি করে তাকে নিয়ে গেল নিকটবর্তী এক হাসপাতালে। বাকিরা তখনো রামনবমীর মিছিলে মত্ত স্লোগানের ঢেউ তুলতে।

হাসপাতালের ডিউটি সেরে তখন বেরোচ্ছিলেন অভিজ্ঞ ডাক্তার মহাম্মদ ইউসুফ মিয়াঁ। মাথার শ্রীরাম ফেট্টি, গায়ের গেরুয়া জামাটা ততক্ষণে রক্তে ভিজে গেছে। মহেশ্বরের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জরুরী চিকিৎসা দরকার। সাতপাঁচ না ভেবে দ্রুত ফিরে গেলেন হাসপাতালে। তিন ঘণ্টার এক দীর্ঘ লড়াই শেষে জয়ী হলেন তিনি ও তাঁর টিম।  

হাঁফ ছেড়ে অটি’র বাইরে বের হলেন। বাইরে তখন মহেশ্বরের মা-বাবা, দিদি ও দাদা এবং কয়েকজন বন্ধু অপেক্ষা করছে। তাঁদের চোখেমুখে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার ছাপ স্পষ্ট। এগিয়ে গিয়ে তাঁদেরকে অভয় দিলেন। ভরসা দিলেন। সাথে জানালেন, অপারেশন সফল হয়েছে এবং মহেশ্বর এখন আশঙ্কা মুক্ত।

মহেশ্বরের বাবা ধর্মপ্রাণ মানুষ। ম্লেচ্ছ ভেবে জীবনে কখনো কোনো মুসলিমের হাতের জলও পান করেননি তিনিকিন্তু আজ মনের গভীরে আজীবন পুষে রাখা ঘৃণা ও বিদ্বেষের প্রাচীর ভেঙ্গে ডাক্তার সাহেবের হাত দু'টো জড়িয়ে ধরলেন। অনুশোচনার অশ্রুতে চোখ দু'টো তখন তার ছলছল করছে, কান্না-জড়ানো কণ্ঠে বললেন— "আপনারা আছেন, তাই পৃথিবীটা টিকে আছে"

১১-০৩-২০১৮

তপ্সিয়া, কলকাতা


1 comment:

  1. সত্যি অসম্ভব সুন্দর একটি অনুগল্প। খুব ভাল লাগল।

    ReplyDelete