Sunday 2 June 2019

নিযার কাব্বানিঃ আমি শিশুদের জন্য লিখছি


এসব আমি শিশুদের জন্য লিখছি
আরব শিশুদের জন্য, তারা যেখানেই থাকুক
রং, বয়স, চোখ যেমনই হোক তাদের  
এসব আমি তাদের জন্য লিখছি 
আমি সেই সব শিশুদের জন্য লিখছি
যারা ভবিষ্যতে জন্মাবে
সমস্ত লোকেদের জন্য লিখছি  
যাদের চোখের তারায় দিন নৃত্য করে
আমি সংক্ষেপে লিখছি
এক সশস্ত্র সন্ত্রাসী যুবতীর কাহিনী
তার নাম ছিল রাশিল
যুদ্ধের দিনগুলি সে কাটিয়েছিল
ইঁদুরের মতো করে, একটি পৃথক নির্জন কুঠুরিতে;   
যে কুঠুরিটি নির্মাণ করেছিল জার্মানরা প্রাগে     
তার জনক এক অপবিত্র ইহুদী
যে জাল নোটের কারবার করত   
আর মেয়েটি একটি পানশালা চালাত প্রাগে
সেখানে আসতো সৈনিকেরা
যুদ্ধ থেমে গেল, জারি হল শান্তির ফরমান
ক্ষমতাধরেরা সই করল তাতে
চারটি শক্তিশালী দেশ
নিজেদেরকে সুপার পাওয়ার মনে করে যারা  
রাষ্ট্রপুঞ্জ নামের চেকটিতে সই করল তারা।   
তারপর, একদিন ভোরে
একটা নৌকা ছাড়ল পূর্ব ইউরোপ থেকে
যার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করছিল বাতাস
নৌকাটি যাত্রা করছিল দক্ষিণ দিকে
ইঁদুর, প্লেগ ইহুদীদের নিয়ে  
কানায় কানায় ভর্তি, নানা জাতির উচ্ছিষ্ট   
পশ্চিম পোল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ইস্তাম্বুল প্রাগের 
ভূগর্ভের এমনকি নরকের;  
তারা আসলো আমাদের এই ক্ষুদ্র দেশে
এই ক্ষুদ্র শান্তিপ্রিয় দেশে
এখানে এসে অপবিত্র করে দিল আমাদের মাটি
শূলে চড়াল আমাদের মেয়েদের
আর শিশুদের করল অনাথ  
অন্যদিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ তার সংবিধান  
ডিবেট করতে থাকল রাষ্ট্রের স্বাধীনতা নিয়ে
স্বশাসনের অধিকার নিয়ে  
সেই সাথে আওড়াতে থাকল
সাফল্যের ভিত্তিহীন আজগুবি বুলি  
শিশুরা মনে রাখবে, আরব শিশুরা
যেখানেই থাকুক তারা
যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে সকলে
সেই সশস্ত্র সন্ত্রাসী যুবতীর কাহিনী
যার নাম ছিল রাশিল;  
সে এসে আশ্রয় নিল আমার মায়ের কোলে
আল্‌-খালিলে অবস্থিত আমাদের সবুজ শ্যামল মাঠে
ধীরে ধীরে কেড়ে নিল আমার আশ্রয়
কেড়ে নিল আমার মাটি, আমার পরিচয়  
তারপর হত্যা করল আমার মা’কে শ্বাস রোধ করে 
শিশুরা মনে রাখবে এই ভূখণ্ডের ইতিহাস
যাকে ধ্বংস করে দিয়েছে দানব রাষ্ট্রেরা
আর রাষ্ট্রপুঞ্জ সুগম করেছে তাদের পথ

আমি এসব শিশুদের জন্য লিখছি
লিখছি সাব্ ইঁদারা, লিট্রোন আল্‌-খালীলের কথা  
সেখানে লেবুর বাগানে নিহত আমার বোন কথা
মনে রেখেছে কি লেবুগুলো
আমার সেই নিহত বোনের কথা 
রাম্লাতে যেগুল আছে,
যেগুল লিদ এবং আল্‌-খালীলে আছে
আমার বোন যাকে শূলে চড়িয়েছিল ইহুদীরা সন্ধ্যার সময়
আমার বোন নাওয়ারকে তাঁর দীর্ঘ কেশরাশির সাথে
সে পড়েছিল ক্ষতবিক্ষত শরীর ছেঁড়াফাটা কাপড়ে
রাম্লা জালীলের পার্বত্য অঞ্চলে
আমার বোনের সেই ক্ষত এখনো অপেক্ষায়
প্রতিশোধের কাঙ্খিত মুহূর্তের, সে-দিনের  
যে দিন প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এই শিশুকিশোরর
আর অবলীলায় প্রাণ বিলিয়ে দেবে  
তারা জানে নাওয়ারের কথা, তার দীর্ঘ কেশের কথা
এবং মরুভুমির মাঝে তার নিখোঁজ সমাধির কথা
বড়দের চেয়ে অনেক বেশি জানে তারা
প্রজন্মের প্রাণ উৎসর্গকারী এই শিশুকিশোরেরা

আমি এসব লিখছি শিশুকিশোরদের জন্য
আমি লিখছি ইয়াফার কথা
সেখানকার প্রাচীন বন্দরের কথা
মূল্যবান পাথরে ভরা সেই ভূখণ্ডের কথা
যেখানকার কমলালেবুগুলো উজ্জ্বল
তারকারাজির মতো দেখতে  
যার বুকে রয়েছে আমার পিতার কবর
আমার ছোট ছোট ভাইদের কবর
তুমি কি চেনো আমার বাবাকে? 
চেনো আমার ভাইদেরকে? 
 ইয়াফাতে আমাদের একটা বাগান ছিল
আর ছিল একটা ছোট্ট বাড়ি, সুখ-শান্তিতে ঘেরা
আমার দয়ালু পিতা ছিলেন একজন বৃদ্ধ চাষি
ভালোবাসতেন রোদ্দুর, ভালোবাসতেন মাটি
ভালোবাসতেন আল্লাহ্কে
আর ভালোবাসতেন যায়তুন আঙুর
অগাধ ভালোবাসতেন নিজ স্ত্রীকে  
ছোট্ট কুটির ও সেখানকার তারকাখচিত বৃক্ষরাজিকে।  
কিছু ভিনদেশী মানুষ এসে হাজির হল সেখানে
মাথায় ও কাঁধে সমাধির নানা সরঞ্জাম নিয়ে
পূর্ব ইউরোপ থেকে, অন্ধকার কালকুঠুরি থেকে
যেন একদল ক্ষুধার্ত হায়েনা
ধ্বংস করে দিল দিগন্ত সবুজ মাঠ
ধ্বংস করে দিল ফল-ফুল-ফসল সব  
জ্বালিয়ে দিল নক্ষত্রে ভরা আমাদের খামারবাড়ি।  
অন্যদিকে, পাঁচটি শিশু দাঁড়িয়ে ছিল বাক্‌হীন
এক নিঝুম রাতে  
বাবার বুকের ভেতর তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন  
নিজ ধরিত্রীর এই আব্রু হরণ মেনে নিতে পারেননি তিনি
প্রতিরোধ গড়ে তুললেন, হাঁক ছাড়লেন—
“দূর হটো, নরকে গিয়ে ঘর করো
আমার থেকে আমার এই ধরিত্রী
কখনই ছিনিয়ে নিতে পারবে না তোমরা   
কখনই না, হে নেড়ি কুত্তার দল!”   
কিছুক্ষণ পর, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন তিনি  
ঐ জানোয়ারদের থেকে ছুটে আসা এক বুলেটে
আমার সেই মহান ও দয়ালু পিতা
লুটিয়ে পড়লেন পবিত্র ভূখণ্ডের এক মেঠো পথে
তিনি তখনো শক্ত হাতে ধরে রেখেছিলেন
জেরুজালেমের মাটি, শিশুরা মনে রাখবে সে কথা
আরব শিশুরা, মানচিত্রের যে প্রান্তেই থাকুক তারা
যারা জন্মেছে এবং যারা জন্মাবে আগামীতে
তারা সবাই মনে রাখবে, মাতৃভূমি কী জিনিস
মনে রাখবে ভিটেমাটির মূল্য;
তাদেরই অপেক্ষায় বসে আছে এই দেশ  
তারা আসবে, এসে প্রতিহত করবে ঐ হায়েনাদের
এবং গড়ে তুলবে এক অটুট প্রতিরোধ
এ আশায় বুক বেঁধেছে জেরুজালেমের গলিপথ!    

قصة راشيل شوارزنبرغ
نزار قباني

أكتب للصغارْ..
للعرب الصغار حيث يوجدونْ
لهم، على اختلاف اللون.. والأعمار.. والعيونْ.. 
أكتب للذين سوف يولدونْ..
لهم أنا أكتب..للصغارْ
لأعين يركض في أحداقها النهارْ
أكتب باختصارْ
قصة إرهابية مجندهْ..
يدعونها راشيلْ 
قضت سنين الحرب في زنزانة منفردهْ  
كالجرذ..في زنزانة منفردهْ..  
شيدها الألمان في براغْ
كان أبوها قذراً من أقذر اليهودْ..
يزور النقودْ.. 
وهي تدير منزلاً للفحش في براغْ 
يقصده الجنودْ... 
وآلت الحرب إلى ختامْ 
وأعلِن السلامْ
ووقع الكبارْ 
أربعة يلقبون نفسهم كبارْ
صك وجود الأمم المتحدهْ.. 
..
وأبحرت من شرق أوروبا مع الصباحْ
سفينة تلعنها الرياحْ 
وِجهتها الجنوبْ
تغص بالجرذان.. والطاعون ..واليهودْ
كانوا خليطاً من سقاطة الشعوبْ 
من غرب بولندا،
من النِمسا، من استنبول، من براغْ.. 
من آخر الأرض.. من السعيرْ 
جاءوا إلى موطننا الصغيرْ
موطننا المُسالم الصغيرْ
فلطخوا ترابنا 
وأعْدموا نساءنا 
ويتموا أطفالنا 
ولاتزال الأمم المتحدهْ..  
ولم يزل ميثاقها الخطيرْ 
يبحث في حرية الشعوبْ 
وحق تقرير المصيرْ
والمُثُلِ المجردهْ 
فليذكر الصغارْ
العرب الصغارُ حيث يوجدونْ
من ولدوا منهمْ، ومن سيولدونْ
قصة إرهابية مجندهْ
يدعونها راشيلْ
حلت محل أميَ الممددهْ
في أرض بيارتنا الخضراء في الخليلْ
أمي أنا الذبيحة المستشهدهْ..
وليذكر الصغارْ..
حكايةَ الأرض التي ضيعها الكبارْ 
والأمم المتحدهْ... 

أكتب للصغارْ 
قصة بئر السبع، واللطرون، والجليلْ..
وأختي القتيلْ 
هناك، في بيارة الليمون، أختي القتيلْ
هل يذكر الليمون في الرملةِ..
وفي اللدِ..
وفي الخليلْ..
أختي التي علقها اليهودُ في الأصيلْ
من شعرها الطويلْ
أختي أنا نُوارْ...
أختي أنا الهتيكة الإزارْ...  
على ربى الرملة والجليلْ...
أختي التي مازال جرحها الطليلْ
مازال بانتظارْ..
نهار ثأرٍ واحدٍ.. نهار ثارْ...  
على يد الصغارْ
جيلٍ فدائيٍ من الصغارْ 
يعرف عن نُوارْ
وشعرِها الطويلْ
وقبرِها الضائع في القفارْ..
أكثرَ مما يعرف الكبارْ..

أكتب للصغارْ
أكتب عن يافا، وعن مرفئها القديمْ 
عن بقعةٍ غالية الحجارْ 
يضيء برتقالها...  كخيمة النجومْ
تضم قبر والدي.. وإخوتي الصغارْ
هل تعرفون والدي
وإخوتي الصغارْ؟ 
إذْ كان في يافا لنا
حديقة.. ودارْ 
يلفها النعيمْ...
وكان والدي الرحيمْ 
مزارعاً شيخاً، يحب الشمسَ، والترابْ
والله، والزيتون، والكرومْ 
كان يحب زوجهُ
 وبيتهُ..
والشجرَ المثقلَ بالنجومْ
.. وجاء أغراب مع الغيابْ
من شرق أوروبا.. ومن غياهب السجونْ
جاءوا كفوج جائع من الذئابْ...  
فأتلفوا الثمارْ
وكسروا الغصونْ
وأشعلوا النيران في بيادر النجومْ
والخمسة الأطفال في وجومْ
والليل في وجومْ 
واشتعلت في والدي كرامة الترابْ..
فصاح فيهم: اذهبوا إلى الجحيمْ
لن تسلبوا أرضي يا سلالة الكلابْ!
.. ومات والدي الرحيمْ  
بطلقة سددها كلب من الكلابْ
عليه، مات والدي العظيمْ
في الموطن العظيمْ
وكفه مشدودة شداً إلى الترابْ
فليذكر الصغار..
العرب الصغار حيث يوجدونْ
من ولدوا منهم ..ومن سيولدونْ
ما قيمة الترابْ..
لأن في انتظارهمْ
معركةَ الترابْ..

(الأعمال الشعرية الكاملة، نزار قباني، 357 - 363)

 [প্রকাশিত- শব্দের মিছিল ২৬ মে, ২০১৯, অনুবাদ বিভাগ]  

No comments:

Post a Comment