Tuesday 4 June 2019

আল-কুরআনের ভাবানুবাদঃ (৪৯) সূরাতু আল্‌-হুজুরাত


৪৯) সূরাতুল্‌-হ়ুজুরাত (কক্ষসমূহ)

মদীনায় অবতীর্ণ, আয়াত ১৮, রুকু 

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ

আল্লাহর নামে (শুরু করছি); তিনি পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيِ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

তোমরা যারা (আল্লাহ্‌ ও আনুষঙ্গিক বিষয়গুলির প্রতি) ঈমান এনেছো, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সামনে বাড়াবাড়ি করো না (অর্থাৎ নিজে থেকে অগ্রিম কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো না)বরং আল্লাহকে ভয় করোনিশ্চয় আল্লাহ (তোমাদের) সবকিছু শুনেন এবং জানেন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَن تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنتُمْ لَا تَشْعُرُونَ

তোমরা যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছো, তোমরা নবীর কন্ঠস্বরের উপর নিজেদের কন্ঠস্বরকে উঁচু করো না এবং তোমরা একে অপরের সাথে যেভাবে উঁচু স্বরে কথা বলো, তাঁর সাথে সেভাবে উঁচু স্বরে কথা বলো না। এতে তোমাদের সৎ কর্মগুলো নিস্ফল ও ব্যর্থ মনোরথ হয়ে যাবে এবং তোমরা তা টেরও পাবে না।

إِنَّ الَّذِينَ يَغُضُّونَ أَصْوَاتَهُمْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ امْتَحَنَ اللَّهُ قُلُوبَهُمْ لِلتَّقْوَى لَهُم مَّغْفِرَةٌ وَأَجْرٌ عَظِيمٌ

যারা আল্লাহর রাসূলের সম্মুখে নিজেদের কন্ঠস্বর নীচু করে রাখে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে সংযমশীলতা ও শিষ্টাচারের জন্য চয়ন ও শোধন করেছেন। তাঁদেরই জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার।

إِنَّ الَّذِينَ يُنَادُونَكَ مِن وَرَاء الْحُجُرَاتِ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ

আর যারা ঘরের পেছন (অর্থাৎ প্রাচীরের আড়াল) থেকে আপনাকে (নাম ধরে চিৎকার করে) উঁচু স্বরে ডাকে, তাদের অধিকাংশ জন অবুঝ ও নির্বোধ

وَلَوْ أَنَّهُمْ صَبَرُوا حَتَّى تَخْرُجَ إِلَيْهِمْ لَكَانَ خَيْرًا لَّهُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

যদি তারা আপনার বের হয়ে তাদের কাছে আসা পর্যন্ত সবর করতো ও ধৈর্য ধরতো, তাহলে তা তাদের জন্যে মঙ্গলজনক হতো (মনে রেখো,) আল্লাহ ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ

হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা (তার ওই খবর সত্য না মিথ্যা) যাচাই করে দেখো যাতে এমনটা না হয় যে (তার খবরের উপর ভিত্তি করে) অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ হানলে; অতঃপর (নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে) নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত হয়ে পড়লে 

وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ

তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তাহলে তোমরা নিজেরাসমস্যায় পড়বেকিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের অনুরাগ সৃষ্টি করেছেন এবং ঈমানকে তোমাদের কাছে হৃদয়গ্রাহী করে তুলেছেনপক্ষান্তরে কুফ্‌ (অবিশ্বাস), পাপাচার ও অবাধ্যতাকে তোমাদের নিকট অপ্রিয় ও ঘৃণ্য করে দিয়েছেন। এমন লোকেরাই সৎ ও সাবলীল পথের পথিক।

فَضْلًا مِّنَ اللَّهِ وَنِعْمَةً وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

এটা আল্লাহর কৃপা ও অনুগ্রহ। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময়।

وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللَّهِ فَإِن فَاءتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ

মুমিনদের (অর্থাৎ বিশ্বাসী লোকেদের) দুটি দল যদি (কোনোরকমের) দ্বন্দ্বে বা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাহলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবেতারপরেও যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয় এবং বাড়াবাড়ি করে, তাহলে তোমরা আক্রমণকারী ও বাড়াবাড়িকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে তাহলে তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং (সর্বদা) ইনসাফ অর্থাৎ সুবিচার করবে। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারী ও ন্যায়পরায়ণ লোকেদের পছন্দ করেন।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

বিশ্বাসী লোকেরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। সুতরাং তোমরা (সর্বদা) তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে; যাতে তোমরা (তাঁর) অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَومٌ مِّن قَوْمٍ عَسَى أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاء مِّن نِّسَاء عَسَى أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الاِسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

তোমরা যারা ঈমান নিয়ে এসেছ, তোমাদের মাঝে কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয়েছে সেই ব্যক্তি উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোনো নারী যেন অপর কোনো নারীকে বিদ্রূপ না করে; কেননা, যাকে বিদ্রূপ করা হয়েছে সেই নারী উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। আর তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। বিশ্বাস স্থাপনের পর মন্দ নামে ডাকা একটি গর্হিত কাজ এবং গোনাহ। আর যারা এহেন গর্হিত কাজ থেকে তওবা-অনুশোচনা করে না তারাই জালিম ও অত্যাচারী

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ

হে বিশ্বাসী লোকেরা, তোমরা বহুবিধ ধারণা থেকে বেঁচে থাকোনিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না আর না একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করোতোমাদের কেউ কি (কখনো) নিজ মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে পছন্দ করবে? (কখনই নয়) তোমরাও তো ঘৃণাই করো (তাহলে পরনিন্দাকেও ঘৃণা করো) আর আল্লাহকে ভয় করোনিশ্চয় আল্লাহ অনুশোচনা গ্রহণকারী ও পরম দয়ালু।

يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّا خَلَقْنَاكُم مِّن ذَكَرٍ وَأُنثَى وَجَعَلْنَاكُمْ شُعُوبًا وَقَبَائِلَ لِتَعَارَفُوا إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ

হে মানব সমাজ, আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে সৃষ্টি করেছি অতঃপর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যাতে তোমরা পরস্পরের সাথে পরিচিত হতে পারোনিশ্চয় তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আল্লাহ্‌র নিকট সর্বাধিক মর্যাদাবান ও সম্মানিত যে তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক সংযমশীল ও আল্লাহ্‌ভীরুনিশ্চয় আল্লাহ্‌ সবকিছু জানেন এবং সবকিছুর খবর রাখেন।

قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُل لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِن قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ وَإِن تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَا يَلِتْكُم مِّنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

কিছু মরুবাসী আরব বেদুঈন এসে বলল, আমরা ঈমান নিয়ে এসেছি। (হে মুহাম্মদ সাঃ) তুমি (তাদেরকে) বলে দাও, তোমরা ঈমান আনোনি; বরং তোমরা বলো, আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি। কেননা এখনও ঈমান তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনিযদি তোমরা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো তাহলে তিনি তোমাদের কর্মফল বিন্দুমাত্রও লাঘব বা হ্রাস করবেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ ثُمَّ لَمْ يَرْتَابُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أُوْلَئِكَ هُمُ الصَّادِقُونَ

তাঁরাই প্রকৃত মুমিন (বা বিশ্বাসী) যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনার পর আর কোনো সন্দেহ পোষণ করে না; এবং আল্লাহর পথে প্রাণ ও সম্পদ দিয়ে সংগ্রাম করেন; তাঁরাই সত্যনিষ্ঠ।

قُلْ أَتُعَلِّمُونَ اللَّهَ بِدِينِكُمْ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ

তুমি (হে মুহাম্মদ সাঃ তাদেরকে) বলো, তোমরা কি তোমাদের দ্বীন ও ধর্ম-পরায়ণতা সম্পর্কে আল্লাহকে অবহিত করছ! অথচ আল্লাহ জানেন যা কিছু আছে ভূমন্ডলে এবং যা কিছু আছে নভোমন্ডলে। আল্লাহ তো সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।

يَمُنُّونَ عَلَيْكَ أَنْ أَسْلَمُوا قُل لَّا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُم بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

তারা মনে করে, তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমার উপকার করেছে (হে মুহাম্মদ সাঃ) তুমি তাদেরকে বলে দাও, তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমার উপকার করেছো এমনটা মনে করো না। বরং আল্লাহ ঈমানের পথে পরিচালিত করে তোমাদেরকে ধন্য করেছেন, যদি তোমরা (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী হয়ে থাকো

إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

নিশ্চয় আল্লাহ নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সকল অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবগত। এবং তিনি তোমরা যা কিছু করো সবই দেখেন।

No comments:

Post a Comment