তাঁর অভাব টের পাই, প্রতিমুহূর্ত!
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
ইদানীং, মাঝে মাঝেই একাকী বসে ভাবি। ভাবি আর চোখের কোণ
চিকচিক করে ওঠে। জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখেছি, বাবা অসুস্থ, বিধ্বস্ত। বেশ কিছুদিন
তো কর্মহীন অবস্থায় বারান্দায় বসে থাকতেন। পরে অবশ্য অনেকটাই স্বাভাবিক হতে
পেরেছিলেন। চিকিৎসার পর হাঁটাচলা, টুকিটাকি কাজকর্মও করতে পারতেন।
অমন ভাবেই যতদিন তিনি বেঁচে ছিলেন, বুকে এক অদ্ভুত রকমের
সাহস ছিল। বল ছিল। ছায়ার মতো যেন সর্বদা আমার পাশে থাকতেন। অভিভাবকসুলভ স্নেহ
মিশিয়ে গাইড করতেন। কিন্তু এই আট বছর, তাঁকে ছাড়াই কাটিয়েছি। এই ক’বছরে গ্রাজুয়েশন
কমপ্লিট করেছি। মাস্টার্স করেছি। চাকরিও পেয়েছি। আরও অনেক কিছু। কিন্তু প্রতিটা
কাজে কোথাও যেন একটা ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। তিনি থাকলে হয়তো সেই ভুলগুলো অগ্রিম ধরিয়ে
দিতেন, সাবধান করে দিতেন!
ইদানীং প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় বড্ড বেশি মনে পড়ে তাঁর
কথা। চোখ বন্ধ করে থাকি দীর্ঘক্ষণ। মনে সাধ জাগে, তিনি যদি একবার, একবার আমার ঘরে এসে
আমার বালিশের পাশে বসে মাথায় হাত বোলান। আর বলেন, বাবু চিন্তা করিস না, আমি তো
আছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। যদি একবার বলেন, হয়তো এখনো ফিরে পাবো সেই আত্মবিশ্বাস;
জীবনযুদ্ধে আজীবন লড়ে যাওয়ার ইন্ধন!
বড় অকৃতজ্ঞ মনে হবে নিজেকে যদি একটা কথা স্বীকার না করি!
বাবাকে হারানোর পর বহু মানুষ সান্ত্বনা দিয়েছেন। পাশে দাঁড়িয়েছেন। আবার কিছু দিন
পর তাঁরা আমার কথা ভুলেও গেছেন। কিন্তু কয়েকজন, আমায় সন্তানের মতো করে
স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছেন। লালন করেছেন। প্রতিটা পদে আমাকে গাইড করেছেন।
আমার দুঃখে দুঃখী হয়েছেন। আমার আনন্দে খুশী হয়েছেন। তাঁরা আমার কাছে পিতৃতুল্য।
নিজ পিতার মতোই তাঁদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। ভালোবাসি। যদিও তাঁদেরকেও এ কথা আমি কোনোদিন
বলতে পারিনি; যেমন ভাবে বাবাকে বলতে পারিনি! এবং আজীবন তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করবো। ভালবাসবো,
ইন্ শা আল্লাহ্!
এসবের বাইরে একটা শ্রেণী আছে। যারা শুভাকাঙ্ক্ষী সাজতে চায়।
আপনজন সাজতে চেষ্টা করে। বাবা-মা’র মতো অধিকার ফলাতে চায়। কিন্তু আমার জীবনের
লড়াইয়ে তাদের অবদান শূন্য। এমনটা শুধু আমার নয়, আমাদের সবার ক্ষেত্রে, সবার জীবনে
ঘটে। এরাই আমার কাছে, সম্পর্ক ও আত্মীয়তা জগতের বিভীষণ।
No comments:
Post a Comment