Wednesday 6 November 2019

বদিউর রহমানঃ যাত্রা পথে!

যাত্রা পথে!
বদিউর রহমান
বাড়ি থেকে কোলকাতা ফিরছি। পাণ্ডুয়া ষ্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষা করছি। ট্রেন আসতে দেরি ছিল। ভাবলাম শু-সাইনারের কাছে জুতোজোড়া পালিশ করিয়ে নিই। জিজ্ঞেস করললাম পালিশ করতে কতো লাগবে? উত্তর এল ‘পনেরো টাকা’। বললাম ‘পালিশ করার রেট এতো বেড়ে গেল কবে?’ উত্তরে শুনলাম ‘জিএসটি লাগু হওয়ার পর থেকে।’
জুতোজোড়া পালিশ চলছে। একটা গাছের বেদির উপর আমি ও অন্যান্য অনেকে ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছি। কিছুক্ষণের মধ্যে বছর পঁচিশের এক যুবক সামান্য খুঁড়িয়ে এসে আমার কাছাকাছি বসা এক মা ও মেয়ের কাছে ভিক্ষের জন্য হাত বাড়ালো আর পায়ের ব্যাণ্ডেজের দিকে দেখিয়ে বললো ‘চিকিৎসা করাবো।’ মেয়েটি দু’ টাকা তার হাতে দিলে সেই যুবক বলল ‘মাত্র দু’টাকা।’ মেয়েটা একটু অপ্রস্তুত হল। ইশারায় সেই যুবককে ডাকলাম। বললাম, ‘উনি তো সাহায্য দিয়েছেন।’
যুবকটি বলল, ‘চিকিৎসায় অনেক খরচ।’ জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার পায়ে হয়েছেটা কী?’ বললো, ‘ট্রাক্টারের চাকা পায়ের উপর দিয়ে চলে গিয়েছিল। এখনো খুব ব্যাথা। ওষুধ খাচ্ছি। ব্যাথা কমছে না।’ বললাম, ‘ওষুধে ব্যাথা কমবে না। আমি তো ডাক্তার। তোমার ইঞ্জেকশন লাগবে। আমার কাছে ইঞ্জেকশনটা আছে। এখানে বসো। ইঞ্জেকশনটা দিয়ে দিচ্ছি। কালকের মধ্যে ব্যাথা উধাও হয়ে যাবে।’
কথাগুলো বলে আমার ব্যাগ থেকে টিয়োভা ইনহেলারের বাক্সটা বের করতেই সে বললো ‘না ইঞ্জেকশন থাক। ডাক্তার বলেছে ক্যালসিয়ামের বড়ি লিখে দেবে। দাম সাড়ে সাতশো।’
ঘটনাচক্রে আমার সঙ্গে শেলক্যাস ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট ছিল। বললাম ওই বড়িও দিচ্ছি।’ সেটা বের করতেই বললো, ‘আপনার দেওয়া ওষুধ খেলে মরে যাবো নাতো? কী গ্যারান্টি আছে? থাক আপনাকে কোনো রকম সাহায্য করতে হবে না।’ বলে সে দ্রুত গতিতে অদৃশ্য হয়ে গেল।
শু-সাইনার আড়চোখে সব দেখছিল, বললো— ‘সকালের দিকে পেটে একটা দাগ দেখিয়ে ভিক্ষা চাইছিল। তখন পায়ের ব্যাণ্ডেজটা ছিল না।’

১১-১০-২০১৯

1 comment:

  1. আয়ের উৎস একাধিক হওয়া অতি গুরুত্বপূর্ণ!😀

    ReplyDelete