হজ্জ ও উম্রার অপরিহার্যতা
আব্দুল মুহসিন বিন হাম্দ আল্-আব্বাদ আল্-বাদ্র
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
হজ্জ এবং উমরা ফরয হওয়ার পর তা দ্রুত সম্পাদন করা জীবনে একবার ওয়াজিব (অপরিহার্য)। একবারের বেশী হলে তা নফল রূপে গণ্য হবে। তবে কেউ যদি (ফরয হজ্জ বা উম্রা
আদায়ের পর) হজ্জ কিংবা উম্রার মানত করে সেক্ষেত্রে তার জন্য মানত পূরণ করা অর্থাৎ আবার হজ্জ বা উম্রা করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অনুরূপভাবে নফল
হজ্জ বা উমরা পালন আরম্ভ করলে তা পূর্ণ
করাও ওয়াজিব হয়ে যায়। মহান আল্লাহ এ মর্মে আদেশ
করেছেন, “আর তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ্জ ও উমরা পূর্ণ করো”[1]
[সূরা আল্-বাক্বারাহ ১৯৬]।
হজ্জ ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণসমূহ
হজ্জ যে ওয়াজিব এবং অপরিহার্য,
সে-বিষয়ে একাধিক প্রমাণ রয়েছে পবিত্র কুরআন এবং সাহিহ হাদিসে। এছাড়া এ বিষয়ে উম্মতের ইজমাও রয়েছে। মহান আল্লাহ ঘোষণা
করেছেন, “এবং যে ব্যক্তির সামর্থ্য রয়েছে, তার জন্য আল্লাহ্র
সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে (কা’বা) ঘরের হজ্জ করা ফরয। যে ব্যক্তি এই আদেশ মানবে না (তার মনে রাখা উচিৎ যে,) আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টি জগৎ হতে স্বয়ংসম্পূর্ণ, তিনি কারো
মুখাপেক্ষী নন”[2] [সূরা আলে ইমরান ৯৭]।
অন্যদিকে রাসূল (সা) বলেছেন, “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। (১) আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত মা‘বূদ (উপাস্য) নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্র
রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেওয়া, (২) সালাত (নামায) প্রতিষ্ঠা করা, (৩) যাকাত আদায় করা, (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রমযান মাসে সিয়াম (রোযা) পালন করা”[3] [বুখারী হা/৮, মুসলিম হা/১১৩, আব্দুল্লাহ ইব্নু উমার (রা) থেকে বর্ণিত]।
এছাড়া ‘হাদিসু জিবরীল’-এ বর্ণীত হয়েছে। ‘ইসলাম কী?’ প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (সা) বলেছেন, “ইসলাম হল— আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্র
রাসূল- একথার সাক্ষ্য
দেওয়া, সালাত কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযান মাসে রোযা রাখা এবং সামর্থ্য থাকলে কা‘বা ঘরের হজ্জ করা।”[4] [মুসলিম হা/৯৩, উমার ইবনুল্ খাত্ত্বাব (রা)
থেকে বর্ণিত]।
সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি আবূ হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা) একদিন বক্তব্য দিচ্ছিলেন। আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে তিনি বললেন, “হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করা হয়েছে। অতএব তোমরা হজ্জ করো”। এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস
করল, হে আল্লাহ্র রাসূল! প্রত্যেক বছর হজ্জ আদায় করা কি ফরয? রাসূল (সা) চুপ করে থাকলেন। কোনো উত্তর দিলেন না। লোকটি একই কথা তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূল (সা) বললেন, “আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে
প্রত্যেক বছর হজ্জ করা ফরয হয়ে যেত এবং তোমরা তা পালন করতে পারতে না।”[5] [মুসলিম হা/৩২৫৭]।
আর তাই, সমগ্র মুসলিম বিশ্ব এ বিষয়ে একমত যে,
হজ্জ ফরয হওয়ার সকল শর্ত যে ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যাবে তার জন্য হজ্জ করা ওয়াজিব।
উম্রা ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণসমূহ
(১) মা আয়েশা (রা)
বর্ণনা করেছেন, “আমি (একদিন) রাসূল (সা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে
আল্লাহ্র রাসূল! নারীদের উপর কি জিহাদ ওয়াজিব? তিনি বললেন, হ্যাঁ,
তাদের উপর জিহাদ ওয়াজিব; তবে সেই জিহাদে লড়াই নেই। আর
তা হল, হজ্জ এবং উম্রা।”[6] [মুস্নাদ
আহ্মাদ হা/২৫৩২২, ইব্নু মাজাহ হা/২৯০১, ইব্নু খুযাইমাহ্ হা/৩০৭৪]। ইমাম আহমাদ এবং ইব্নু
মাজাহ্র নিকট হাদিসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তসহ বর্ণীত। ইমাম ইব্নু খুযাইমাহ্ হাদিসটি বর্ণনা করার পর মন্তব্য করেছেন, “নারীদের
উপর লড়াইবিহীন জিহাদ আছে” বলে রাসূল (সা) বোঝাতে চেয়েছেন যে, হজ্জের মত উম্রাও
ওয়াজিব। কেননা ‘আলাইহিন্না (তাদের উপর...) শব্দবন্ধনীটি ওয়াজিব
হওয়াকে সাব্যস্ত করে।
কারণ, নফল (ঐচ্ছিক) কোনো বিষয়ের ক্ষেত্রে এমন শব্দ ব্যবহার করা হয় না।
(২) উমার (রা) হতে বর্ণিত ‘হাদীসু জিবরীল’-এর অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “ইসলাম হল— আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মদ (সা) আল্লাহ্র রাসূল- তুমি একথার সাক্ষ্য
দেবে, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত আদায় করবে, হজ্জ ও উমরা করবে, বীর্যপাত অথবা সহবাস জনিত কারণে অপবিত্র হলে গোসল করবে, পূর্ণরূপে অযূ করবে এবং রমযান মাসে সিয়াম পালন করবে।”[7] [ইব্নু খুযাইমাহ্ হা/৩০৬৫, সনদ ‘সাহীহ’ এবং বর্ণনাকারীগণ সকলেই
সেকাহ্ (বিশ্বস্ত), দারাক্বুতনী ২/২৮২ এবং তিনি এর সনদকে ‘সাহীহ’ বলে মন্তব্য করেছেন]।
(৩) আবূ রাযীন
উক্বায়লী (রা) থেকে বর্ণীত। তিনি একদিন রাসূল (সা)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, “হে আল্লাহ্র রাসূল! আমার পিতা বৃদ্ধ মানুষ। তিনি হজ্জ, উমরা বা সফর (যাত্রা) কোনোটাই করতে সক্ষম নন। রাসূল (সা) বললেন, তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ্জ এবং উমরা আদায় করো।”[8] [তিরমিযী হা/৯৩০, এবং তিনি মন্তব্য করেছেন, হাদিসটি ‘হাসান-সাহীহ’; তাছাড়া হাদিসটি মুসলিমের শর্তে বর্ণীত
হয়েছে।]।
(৪) সুবাই ইব্নু মা‘বাদ থেকে বর্ণীত। তিনি (একদিন) উমার (রা)-কে বলেন, “হে আমীরুল মুমিনীন (মুসলিম সমাজের সমাজপতি)! আমি পূর্বে বেদুইন (যাযাবর) খ্রিস্টান ছিলাম। এখন আমি ইসলাম
গ্রহণ করেছি। আমি জিহাদ করতে
আগ্রহী। এবং আমার উপর হজ্জ ও উমরা ফরয হয়ে গেছে। আমি (একদিন) আমার সম্প্রদায়ের একজনকে এ
বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, তুমি হজ্জ ও উমরা একসাথে আদায়
করে নাও এবং সহজলব্ধ একটি হাদি (কুরবানির পশু)-কে কুরবানি করো। ফলে আমি একসাথে
হজ্জ এবং উমরার এহরাম বেঁধেছি। এসব শুনে উমার (রা) আমাকে বললেন, তুমি তোমার নবী (সা)-এর সুন্নত অনুযায়ী আমল করেছো।”[9] [আবূ দাঊদ হা/১৭৯৯, বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটির সনদ ‘সাহীহ’]।
﴿ وَأَتِمُّواْ ٱلۡحَجَّ وَٱلۡعُمۡرَةَ لِلَّهِۚ﴾
﴿وَلِلَّهِ عَلَى ٱلنَّاسِ حِجُّ ٱلۡبَيۡتِ مَنِ ٱسۡتَطَاعَ
إِلَيۡهِ سَبِيلٗاۚ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ ٱللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ ٱلۡعَٰلَمِينَ﴾
«بُنِىَ الإِسْلاَمُ
عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا
عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَإِقَامِ الصَّلاَةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَحَجِّ
الْبَيْتِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ»
«الإِسْلاَمُ
أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ
وَتُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ
الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلاً»
خطبنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال: أيها الناس!
قد فرض عليكم الحج فحجوا، فقال رجل: أ كلّ عام يا رسول الله؟ فسكت حتى قالها ثلاثا،
فقال رسول الله صلى الهه عليه وسلم: لو قلت نعم لوجبت، ولما استطعتم.
قلتُ يا رسول الله! هل على النساء
من جهاد؟ قال: نعم! عليهنّ جهاد لا قتال فيه: الحج والعمرة.
«الإِسْلاَمُ أَنْ
تَشْهَدَ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ وَأَنْ
تُقِيمَ الصَّلاَةَ وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ وَتَحُجَّ وَتَعْتَمِرَ وَتَغْتَسِلَ
مِنَ الْجَنَابَةِ وَأَنْ تُتِمَّ الْوُضُوءَ وَتَصُومَ رَمَضَانَ»
«إِنَّ أَبِي شَيْخٌ
كَبِيرٌ، لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ، وَلَا الْعُمْرَةَ، وَلَا الظَّعْنَ، قَالَ:
حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ»
يا
أمير المؤمنين! إني كنت رجلا أعرابيا نصرانيا وإني أسلمتُ، وأنا حريص على الجهاد،
وإني وجدت الحج والعمرة مكتوبين عليّ، فأتيت رجلا من قومي فقال لي: اجمعهما واذبح
ما استيسر من الهدي، وإني أهللت بهما معا، فقال لي عمر: هُديت لسنّة نبيك صلى الله
عليه وسلم
No comments:
Post a Comment