Saturday 24 March 2018

আহমাদ ইবনু আব্দে রাব্বেহি


আহ়্মাদ ইব্‌নু আব্দে রাব্বেহি
(৮৬০ – ৯৪০ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
জন্ম ও পরিচয়ঃ
ইব্‌নু আব্দে রাব্বেহি ছিলেন একজন দক্ষ লেখক ও প্রখ্যাত কবি। তিনি ছিলেন বিখ্যাত আল্‌-‘ইক়্দুল ফ়ারীদ গ্রন্থের প্রণেতা তথা আল্‌-মুওয়াশ্‌শাহ়্ কবিতা উদ্ভাবনে অগ্রপথিক। আব্বাসী কবি আল্‌-মুতানাব্বী তাঁকে মালীহ়ুল্‌ আন্দালুস (স্পেনের লাবণ্য) নামে আখ্যায়িত করেন। তাঁর প্রকৃত নাম আহ়্মাদ, উপনাম আবু ‘উমার, উপাধি শিহাবুদ্দীন। পিতার নাম মুহ়াম্মাদ, এক ঊর্ধ্বতন প্রপিতামহের নাম ‘আব্দু রাব্বেহি। তিনি দাসত্ব সূত্রে স্পেনের উমাইয়া খলীফাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। কেননা তাঁর প্রপিতামহ ছিলেন স্পেনের উমাইয়া খলীফা হিশাম বিন ‘আব্দুর্‌ রাহ়্মান আদ্‌-দাখ়িলের গোলাম। তিনি কর্ডোভাতে ১০ই রমযান ২৪৬ হিজরী মোতাবেক ৮৬০ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
 
জীবন ও শিক্ষাঃ
তিনি কর্ডোভাতেই লালিত পালিত হন। প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন পিতার কাছেই। এমনকি তাঁর কাছেই স্প্যানিশ ও আরবী ভাষা রপ্ত করেন। অতঃপর একটি বিদ্যালয় থেকে আরবী ব্যাকরণ, গণিত, ইতিহাস, ভূগোল ইত্যাদি অধ্যয়ন করেন। তারপর স্পেনের বিভিন্ন জ্ঞানীগুণী ও সাহিত্যিকদের থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। জ্ঞান ও বর্ণনার ক্ষেত্রে প্রশস্তি এবং গদ্য ও পদ্য রচনায় বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন। তাঁর যুগে তিনি বিস্তৃত খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন। দীর্ঘ শূন্যতার পর আরবী সাহিত্যে যারা প্রভাব সৃষ্টি করেছিলেন তিনি তাঁদের একজন ছিলেন।
 
শাসকের কবি রূপেঃ
মাত্র ২৬ বছর বয়সেই কবি হিসাবে তাঁর সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে খলীফা মুহাম্মাদ (প্রথম) তাঁকে নিজ সভাকবি রূপে গ্রহণ করেন। তারপর ক্রমান্বয়ে তাঁর পুত্র মুন্‌যির, দ্বিতীয় ‘আব্দুল্লাহ এবং তৃতীয় আব্দুর রাহমান সকল খলীফাই কবিকে সেই পদে অধিষ্ঠিত রাখেন। কবি তাঁদের নিকট থেকে প্রচুর উপঢৌকন এবং অশেষ সম্মান অর্জন করেন। এই সময়টি তার জীবনের সর্বাধিক স্বচ্ছল অধ্যায় ছিল। তিনি তাঁদের প্রশংসাগীতি রচনা করেন। তৃতীয় আব্দুর রাহমানের প্রশংসায় তার রচিত ৪৪৫ লাইনের কবিতাটি প্রভূত প্রশংসা কুড়িয়েছিল।
 
জীবনের শেষলগ্নে অনুতপ্ত কবিঃ
যখন বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলেন, অনুভব করলেন, পার্থিব প্রাপ্তির পিছনেই তার জীবন নষ্ট হয়ে গেছে। তাঁর হৃদয় তখন আল্লাহ্‌ভীরুতার দিকে ঝুঁকে গেল। তিনি বেশ কিছু ধর্মীয় কবিতা রচনা করলেন। আর সেসব কবিতার নামকরণ করলেন আল্‌-মুমাহ়্হ়িস়াত (অনুতপ্ত কবিতা বা পাপ মোচনকারী কবিতা)। এগুলো ছিল আল্লাহ্‌ভীরুতা ও উপদেশমূলক কিছু ছোট ও কিছু বড় কবিতা। তিনি যৌবনের উন্মাদনায় লেখা নারী প্রশস্তিমূলক কবিতাগুলোকে এই সমস্ত কবিতা দ্বারা খণ্ডন করেন।
 
জীবনের অন্তিমলগ্নে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে ১৮ই জুমাদাল্‌ উলা, রোজ রবিবার, ৩২৮ হিজরি মোতাবেক ৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। পরের দিন সোমবার কর্ডোভায় বানী আব্বাসের কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর।
 
কবিপ্রতিভাঃ
তিনি ছিলেন স্বভাব কবি। অল্প বয়স থেকেই তার অন্তর কবিতার প্রতি আকৃষ্ট হয়। তার অধিকাংশ কবিতাতেই বিভিন্ন বর্ণনা এবং নারী-বন্দনা সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। কবি ইব্‌নু যাইদুনের রচনাশৈলীর সঙ্গে তাঁর রচনার মিল পরিলক্ষিত হয়। তিনি তাঁর কবিতায় প্রাচ্যবিদদের আবেগপূর্ণ ও বিশুদ্ধ বর্ণনাভঙ্গীর সঙ্গে পাশ্চাত্যবিদদের সূক্ষ্ম ও স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশভঙ্গীর সংমিশ্রণ ঘটান। আশ্‌-শে’রুল্‌ ক়াস়াস়ী বা কাহিনীনির্ভর কবিতা রচনা তাঁর সহজাত ছিল। যদিও এই জোন্‌রার কবিতা আরবী ভাষায় তখনো পর্যন্ত খুব কমই ছিল।
 
আল্‌-‘ইক়্দুল ফ়ারীদঃ  
তাঁর রচিত এই গ্রন্থটি ছিল আরবী সাহিত্যের প্রধান গ্রন্থগুলির মধ্যে অন্যতম। এই গ্রন্থে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়, যেমন সংবাদ ও বংশ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসা, প্রবাদ, কবিতা, অলংকার এমনকি চিকিৎসা এবং সঙ্গীত বিষয়েরও আলোচনা রয়েছে। বিষয় নির্ভর ২৫টি খন্ডে তিনি এই গ্রন্থটিকে বিভক্ত করেন। প্রতিটি খণ্ডই একটি অর্থবহ ভূমিকা এবং বিভিন্ন মূল্যবান পাথরের নাম দিয়ে শুরু করেছেন। যেমন আল্‌-ইয়াকুতাহ্‌, আল্‌-লু’লুয়াহ্‌, আল্‌-ফারীদাহ্‌, আয্‌-যাবারজুদাহ্‌ আল্‌-মার্‌জানাহ্‌, আল্‌-জুমানাহ্‌ ইত্যাদি।
 
তিনি তাঁর নারী-বন্দনামূলক একটি কবিতায় বলেছেন—
يا لؤلؤا يسبي العقول أنيقا     ورشا بتقطيع القلوب رقيقا
তিনি তাঁর এক কবিতায় বর্শা, বল্লম এবং তরবারির বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন—
بكل ردي كأن سنانه شهاب      بدأ في ظلمة الليل ساطع

No comments:

Post a Comment