Wednesday 21 March 2018

চণ্ডিপুর ফুটবল টিম


চণ্ডিপুর ফুটবল টিম  
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

আমার গ্রামের পশ্চিম দিকে, একটু দূরে কদমডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের দেওয়াল ঘেঁষে শুয়ে আছে একটি ছোট মাঠ, সবুজ গালিচা মুড়ে। মাঠের কাঁধে কখনো উষ্ণ তো কখনো শীতল শ্বাস ফেলছে তুলাই নদী। স্কুলে পড়ার সময়, মাঠে খেলে হাঁপিয়ে গেলে তুলাইয়ের জল গা ধুয়ে দিত আমাদের। বাগানের আম ক্ষুধার তীব্রতাকে প্রশমিত করতো; তখন তো আর মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা ছিল না স্কুলে। একবার তো আম পাড়তে গিয়ে ডাল ভেঙে পড়ে গেছিলাম। বাম হাতটা ভেঙে গেছিল সেবার। মাঝেমাঝে আমাদের ক্লাসও হতো আমগাছ-তলায়, খানিকটা শান্তি নিকেতন-স্টাইলে।

আগে গ্রাম-বাংলায় ফুটবলের চল ছিল বেশ। টুর্নামেন্টও হতো। সেবার ফাইনালে উঠেছে চণ্ডিপুর। বিপরীত দিকে একটি শহরতলীর টিম। বেশ উন্নত। জমজমাট আসর বসেছে ফাইনালকে ঘিরে। বড়রা সবাই যাচ্ছে খেলা দেখতে। কিন্তু ছোটদের যেতে মানা। তবে, আমরা কজন লুকিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। তুলাইয়ের আঁচল ধরে হেঁটে পৌঁছলাম বালাস্‌পুর মাঠে। খেলা শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। প্রাণপণ লড়াই করেও হেরে গেছিল সেদিন চণ্ডিপুর।

তবে, আজ যখন ভাবি সেদিনের কথা, পুলকিত হয় আমার অবুঝ মন। কারণ সেদিন সেই চণ্ডিপুর টিমে সবাই ছিল, হিন্দু-সাঁওতাল-মুসলিম সবাই; যেন একটা পরিবার। উৎসাহ যুগিয়েছিল সবাই মিলে। হেরে গিয়ে কেঁদেও ছিল সকলে। সেদিনের চণ্ডিপুর ছিল বৃহৎ ভারতের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। সেই দিনের সে-ছবি, সে-সংস্করণ, সে-ঐক্য, সে-সম্প্রীতি ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু বর্তমান ভারতে। শুধু ভারতে কেন, একই অবস্থা তো পুরো গ্লোবাল ভিলেজ-জুড়ে।

No comments:

Post a Comment