Saturday 17 March 2018

আহমাদ আমীন


আহ়্মাদ আমীন
(১৮৮৬ ১৯৫৪ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
জন্ম ও পরিচয়ঃ
প্রখ্যাত ঐতিহাসিক, লেখক ও সাহিত্য সমালোচক আহ়্মাদ আমীন বিন ইব্‌রাহীম আত়্-ত়াব্বাখ় ২রা মুহার্‌রাম ১৩০৪ হিজরী মোতাবেক ১ লা অক্টোবর, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে কায়রোর এক রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর শিক্ষক পিতা শায়েখ ইব্‌রাহীম আত়্-ত়াব্বাখ় একজন আযহারী বিদ্বান ছিলেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি মসজিদে ইমামতিও করতেন। তিনি পবিত্র কুরআনের হাফিয ছিলেন। এছাড়া তাফসীর, ফিক্‌হ, হাদীস ও সাহিত্যের পুস্তকাবলী সংগ্রহের নেশা ছিল।
 
শৈশব ও শিক্ষাঃ
লেখকের পিতা বাল্যকাল থেকেই পুত্রের পড়াশোনার যত্ন নেন। পিতার নিকট তিনি কুরআন মজীদের পাঠ গ্রহণ করেন। এরপর তিনি মক্তবে ভর্তি হন। সেখানের পাঠ সমাপ্ত করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। অতঃপর পিতা তাঁকে আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। তিনি সেখানে চার বছর বিদ্যার্জন করেন।
 
১৯০৭ সালে ধর্মীয় বিচারক ও উকিল তৈরির জন্য মাদ্‌রাসাতুল্‌ ক়াদ়া আশ্‌-শার্‌য়ী (শরীয়তি আইন বিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে আল-আযহারের মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি নেয়। লেখকও তাদের মধ্যে ছিলেন। এটি একটি উন্নতমানের আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। সেখানে ধর্মীয় পড়াশোনার পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান ও সাহিত্যেরও পাঠ দেওয়া হত। লেখকের উপর প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ট প্রভাব পড়েছিল। কিছু সময়ের জন্য তিনি মিসর বিশ্ববিদ্যালয়েও অনিয়মিত ভাবে শিক্ষার্জন করেন। এছাড়া একজন মহিলা শিক্ষকের নিকট ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করেন।
 
কর্ম জীবনঃ
তিনি ১৯১১ সালে শরীয়তি আইন বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করেন এবং আলিমীয়্যাত (স্নাতক) ডিগ্রী প্রাপ্ত হন। অতঃপর ১৯১২ সালে উক্ত বিদ্যালয়েই শিক্ষক নিযুক্ত হন এবং ১৯২১ সাল পর্যন্ত উক্ত পদে আসীন থাকেন। এরপর তিনি বিভিন্ন আদালতে বিচারকের পদ অলঙ্কৃত করেন। ১৯২৬ সালে তিনি কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী সাহিত্যের অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং ১৯৩৯ সালে কলা বিভাগের ডীন পদে উন্নীত হন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। এই সময়কালেই তাঁর লেখনী প্রতিভার যথার্থ বিকাশ সাধিত হয়। ১৯৪৭ সালে তিন দামাসকাসের আরবী ভাষা পরিষদের (আল্‌-মাজ্‌মাউল্‌ ইল্‌মী আল্‌-‘আরাবী) সদস্য নিযুক্ত হন। অতঃপর ওই বছরই আরব লীগের সাংস্কৃতিক বিভাগের ডাইরেক্টর নিযুক্ত হন। এছাড়া মিসরীয় ভাষা পরিষদ এবং জাতীয় গ্রন্থাগার দারুল্‌ কুতুব আল্‌-মিস়্রিয়্যাহ্‌-এর উচ্চ কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৪৮ সালে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এছাড়া তিনি লেখা, অনুবাদ ও প্রকাশনা কমিটি লাজ্‌নাতুত্‌ তালীফ ওয়াত্‌ তার্‌জুমাহ্‌ ওয়ান্‌ নাশ্‌র-এর একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তিনি সংস্থাটির তত্ত্বাবধায়ক ও সভাপতি ছিলেন।
 
মৃত্যুঃ
আহ়্মাদ আমীন ৩০ শে রামাদ্বান, ১৩৭৩ হিজরী মোতাবেক ৩০ শে মে, ১৯৫৪ সালে কায়রোয় ইন্তেকাল করেন।
 
রচনা সমগ্রঃ
সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, আইন সহ একাধিক ময়দান ছিল তাঁর কলমের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র। তবে তাঁর অক্ষয় কীর্তি হয়ে রয়েছে ইসলামী সভ্যতার ইতিহাস নিয়ে তিন খণ্ডে রচিত তাঁর গ্রন্থটি। তিনি একাধিক পুস্তক রচনা করেছেন, তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল— 
() আল্‌-আখ্‌লাক, (শিষ্টাচার) কায়রোর আল্‌-মাত্‌বাআতুর্‌ রাহ্‌মানীয়্যাহ্‌ থেকে ১৯২০ সালে প্রকাশিত। 
() ফাজ্‌রুল্‌ ইস্‌লাম, (ইসলামের আবির্ভাব) ১৯২৮ সালে কায়রোর মাতবাআতুল ঈতিমাদ থেকে প্রকাশিত  
() দ়ুহ়াল্‌ ইস্‌লাম (ইসলামের সকাল) গ্রন্থটি তিন খণ্ডে সমাপ্ত। এটিও উক্ত প্রকাশনী থেকে ১৯৩৩ সালে প্রকাশিত 
() ফায়দ়ুল্‌ খাতির (ভাবনার প্রাচুর্য) আর-রিসালাহ্‌ এবং আস-সাকাফাহ্‌ সহ অন্যান্য ম্যাগাজিনে প্রকাশিত লেখকের ছখণ্ডে সংকলিত প্রবন্ধ সংকলন। এটি কায়রোর মাতবাআতু লাজনাতিত তালীফ থেকে ১৯৪০ সালে প্রকাশিত হয়। 
() যুহ্‌রুল্‌ ইস্‌লাম (ইসলামের মধ্যাহ্ন) এই গ্রন্থটি চার খণ্ডে সমাপ্ত। এটিও উপরোক্ত প্রকাশনী থেকে ১৯৪৫-৫৫ সালে প্রকাশিত। 
() যুআমাউল্‌ ইস্‌লাহি ফিল্‌ আস্‌রিল্‌ হাদীস (আধুনিক যুগের সমাজ সংস্কারকগণ) কায়রোর মাক্‌তাবাতুন্‌ নাহ্‌যাতিল মিসরীয়্যাহ্‌ থেকে ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত। 
() হায়াতী (আমার জীবন) লেখকের স্বরচিত আত্মজীবনী। গ্রন্থটি কায়রোর মাতবাআতুল লাজনাতিত তালীফ থেকে ১৯৫০ সালে প্রকাশিত হয়। 
() ইলা ওয়ালাদী (আমার সন্তানের প্রতি) ১৯৫১ সালে কায়রোর মাকতাবাতুল আদাব থেকে প্রকাশিত। 
() ইয়াউমুল্‌ ইস্‌লাম (ইসলামের দিন) কায়রোর দারুল মাআরিফ থেকে ১৯৫২ সালে প্রকাশিত। 
(১০) আন্‌-নাক্‌দুল্‌ আদাবী (সাহিত্য সমালোচনা) দু খণ্ডে সমাপ্ত এই গ্রন্থটি কায়রোর মাতবাতুল লাজনাতিত তালীফ থেকে ১৯৫২ সালে প্রকাশিত হয়। 
(১১) কামূসুল্‌ আদাত (মিসরীয় লোকাচারের অভিধান) উপরোক্ত প্রকাশনী থেকে ১৯৫৩ সালে প্রকাশিত। 
(১২) আশ্‌-শার্‌কু ওয়াল্‌ গার্‌ব (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য) এটিও উক্ত প্রকাশনী থেকে ১৯৫৫ সালে প্রকাশিত হয়।

No comments:

Post a Comment