আব্দুল
মাতিন ওয়াসিম
ক'দিন আগে, রাতের বেলা আমি নিজ ল্যাপটপে কাজ করছি;
হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠল। দেখলাম একটা অপরিচিত
নম্বর। ইচ্ছে হচ্ছিল না, তবুও রিসিভ করলাম। ও প্রান্ত থেকে-
"স্যার আমি শজিবুর বলছি..."। তার কথা থেকে জানতে পারলাম,
সে এখন হরিয়ানায় একটি প্লাইউড মিলে কাজ করে।
লেবারদের কাজ ও লেনদেনের হিসেব লিখে রাখতে হয় তাঁকে, মাইনে ১৫/২০ হাজার...।
আমি কিছু দিন আমার এলাকার একটি মাদ্রাসায়
কাজ করেছি। সেখানে আমি ছেলেদের আরবি ভাষা শেখাতাম। ঐ মাদ্রাসায় ৩৫/৪০ ছাত্র
আবাসিক ছিল। মাদ্রাসার পাশে ছিল একটি সরকার অনুমোদিত
হাই মাদ্রাসা। ইস্লামিক থিওলজি ও ইস্লামিক স্টাডিজ-এর পাশাপাশি, সেই হাই মাদ্রাসার পাঠ্যক্রমকে অনুসরণ করে আমাদের
ছেলেদেরকেও ইংরেজি,
বাংলা, ইতিহাস,
ভূগোল, অংক,
জীবন
বিজ্ঞান, ভৌত বিজ্ঞান ইত্যাদি পড়ান হতো।
শজিবুর
তখন খুব ছোট। হঠাৎ তার বাবা মারা যায়; কিছু দিন পর তার মায়ের অন্য জায়গায় বিয়ে
দেওয়া হয়। আর ছোট্ট শজিবুর ঠাই পায় নানিমার কোলে। ৬/৭ বছর বয়সে তার নানা তাঁকে
ভর্তি করে দেয় মাদ্রাসায়; যাতে অল্প খরচে (প্রায় বিনা খরচে) কিছু লেখা পড়ে
শিখতে পারে। শজিবুর সেই মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণী অবধি পড়া শুনা করেছিল;
সেখানে তাঁকে কোন স্কুল ফিস দিতে হতো না,
কোন টিউশন ফি দিতে হতো না;
অপরন্তু খাওয়া-থাকাও ফ্রি ছিল। অষ্টম শ্রেণীর
পর আর শজিবুরের লেখাপড়া করা হয়নি; ঐ মাদ্রাসায় যে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্তই ব্যবস্থা ছিল। তার
পর শজিবুর নিজের জিনিসপত্র গুটিয়ে বাড়ি চলে যায়...।
বহু বছর পর, সেদিন জানতে পারলাম, ঐ অষ্টম শ্রেণীর বিদ্যাকে সম্বল করে আজ ও একটা ছোট্ট চাকরি করছে। দু'পয়সা রোজগার করে বাড়িতে দিতে পারছে। ঐরকম মাদ্রাসা না থাকলে জানিনা কত শজিবুর ভিক্ষা করতো, কত শজিবুর অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ত...।
আর
চাঁদার টাকায় মার্সিডিজ কিনে যারা বড় বড় বাতেলা হাঁকছে,
শীততাপ-নিয়ন্ত্রিত অফিসকক্ষে বসে যে বা যারা মাদ্রাসায় অসামাজিক কার্যকলাপ শেখানো হয়, সন্ত্রাসের শিক্ষা দেওয়া হয় ইত্যাদি সূর তুলে মাদরাসাগুলো বন্ধ করে দেওয়া
হোক- দাবী তুলছে; তাঁরা আগে ওরকম একটি অবৈতনিক স্কুল খুলুক
যেখানে বিনা পয়সায় অনাথ ও অসহায় শিশুদের লিখতে পড়তে শেখানো হবে। এবং মানুষকে 'মানুষ' হবার ও 'মানুষ ভাবার' শিক্ষা দেওয়া হবে ...। তারপরে না হয়...!
No comments:
Post a Comment