ইমাম মুহ়াম্মাদ ‘আব্দুহূ
(১৮৪৯ – ১৯০৫ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
তিনি ছিলেন ইসলামী চিন্তাধারার সংস্কারক, আধুনিক ইসলামী আরবি সাহিত্যের নবজাগরণের নেতা এবং সংশোধনের পথে আহ্বায়কদের মধ্যে অন্যতম। তিনি তার জ্ঞান ও প্রচেষ্টা দ্বারা স্থাবর আরবীয় বোধকে মুক্ত করার কাজে এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজকে উন্নত করার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর সম্পর্কে যাইয়্যাত বলেছেন, তিনি প্রখর স্মৃতিশক্তি, দূরদৃষ্টি এবং উদারতার ক্ষেত্রে ইব্নু খালদুনের মতো ছিলেন। তার পুরো নাম হলো মুহাম্মদ বিন আবদুহু বিন হাসান খায়রুল্লাহ। তিনি ১৮৪৯ খ্রীষ্টাব্দে ‘বাহিরাহ’ শহর সংলগ্ন ‘নাস্র’ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৬৬ সালে আল আয্হার বিশ্ববিদ্যালয়ে গমন করেন। সেখান থেকে ১৮৭৭ খ্রীষ্টাব্দে ‘আলিমিয়্যাহ’ ডিগ্রী অর্জন করেন।
১৮৭৯ সালে মাদরাসা দারুল উলুমে ইতিহাসের শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮২২ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আহমদ আরবীর বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু বিদ্রোহে ব্যর্থ হলে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তারপর তিন বছরের জন্য বেইরুতে নির্বাসিত করা হয়। তারপর ১৮৪৪ সালে তার শিক্ষক জামালুদ্দীন আফগানীর আহ্বানে প্যারীস ভ্রমণ করেন এবং আল্-‘উর্ওয়াতুল্ উস্কা নামক পত্রিকা প্রকাশ করেন। ১৮৮৫ সালে সেখান থেকে বেইরুতে ফিরে এসে সেই বছরেই আল্-‘উর্ওয়াতুল্ উস্কা নাম দিয়ে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯০৫ সালের ১১ই জুলাই সন্ধ্যা পাঁচটায় এই মহান ব্যক্তিত্ব দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আলেকজান্দ্রিয়াতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তাকে কায়রোতে সমাহিত করা হয়। তার স্মৃতিয়ে বহু কবি শোকগাথা রচনা করেছেন।
তার যুগে আরবী সাহিত্যের ও ভাষার চূড়ান্ত অবনমন ঘটেছিল বলা যায়، যেটাকে ঐতিহাসিকরা অনারবদেরও উচ্ছিষ্ট বলেছেন। এই অবস্থায় তিনি ভাষাকে রক্ষা করতে এবং পুনরুজ্জীবিত করতে আপ্রান চেষ্টা চালান। তিনি আল্-জারীদাতুর্ রাস্মিয়্যাহ্ নামক পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। তৎকালীন লেখকদের বাক্যবিন্যাস ও লিখন পদ্ধতিগত ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা পুনরায় লিখে দিতেন সেই সমস্ত লেখক ও নবাগতদের শিক্ষা দিতে।
রচনার ক্ষেত্রে তিনি ইবনুল আমীরদের লিখন পদ্ধতির অনুসারী ছিলেন। তিনি ছন্দোবদ্ধ বাক্য ব্যবহার করতেন। তার লেখার বিষয় বস্তুর মধ্যে জাহিযের ভাবধারা লক্ষ্য করা যায়। তাঁর লেখা চিঠিপত্রে ইব্নুল্ ‘আমীদের ছাপ মেলে।
পৃথক ভাবে ‘মুফতী’ পদের অধিকারী মিশরে তিনিই প্রথম। তাকে এই পদে নিয়োগ করেন খোদিভ আব্বাস। ওয়কফ্، উত্তরাধিকার، অর্থনৈতিক, পারিবারিক ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কিত তার মোট সমাধান সংখ্যা ছিল ৯৪৪ টি। এটা লক্ষ্যণীয় যে، তার এই সব সমাধান সূত্রের আশি শতাংশই ছিল অর্থনৈতিক সমস্যা সংক্রান্ত।
তাঁর অসংখ্য রচনাবলীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল— শার্হু দালায়িলিল্ ই’জায, আস্রারুল্ বালাগাহ্, রিসালাতুত্ তাওহীদ, আল্-ইস্লাম ওয়ান্ নাস্রানিয়্যাহ্ নায়নাল্ ‘ইল্মি ওয়াল্ মাদানিয়্যাহ্, আর্-রাদ্দু 'আলা হানূতূ আল্-ফারান্সী ইত্যাদি।
No comments:
Post a Comment