আব্দুল মাতিন
ওয়াসিম
ক’দিন ধরে দেখছি,
বিতর্কের বাজার বেশ সরগরম হয়ে রয়েছে চিংড়িকে কেন্দ্র করে। চিংড়ি সম্বন্ধে আমার খুব
বেশি ধারণা নেই; গলদা-বাগদা-খুচরো এটুকুই জানি। তবে চিংড়ি যে আমার পছন্দের খাবার
তা আমার প্রায় সব বন্ধুবান্ধব জানে। বিশেষ করে ওবাইদ ও আমিন; তাঁরা আমার জন্য
বিভিন্ন জায়গা থেকে চিংড়ি নিয়ে আসে।
ক’দিন আগে কেউ
নাকি ফাত্ওয়া (সিদ্ধান্ত ও মতামত) দিয়েছে- চিংড়ি খাওয়া হারাম। আর তা নিয়ে চলছে
জোর বিতর্ক। বিতর্ক-আলোচনা চলা ভালো, যদি
ইতিবাচক হয়। কিন্তু বিতর্কের উপজীব্যটাই বদলে গেছে; চিংড়ি হারাম না হালাল- এই নিয়ে
বিতর্ক না করে; সমাজের অধঃপতনের জন্য সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে আলেম সমাজকে।
এপ্রসঙ্গে কয়েকটা
কথা বলতে চাই-
১- চিংড়ি হারাম; কোন-একজন
ফাত্ওয়া দিয়েছে আপনি তা মানবেন কেন ? ইসলামের জ্ঞান অর্জনের দায়িত্ব কি
মৌলানাদের? না মুসলিম হিসেবে আপনারও দায়িত্ব নিজ ধর্মকে সঠিক ভাবে জানা? আমি তো
মনে করি, ইসলাম জীবনযাপনের পথ ও পদ্ধতিকে বাতলায়। তাই সবার অধিকার রয়েছে ইসলামকে
জানার, অধ্যয়ন করার। কারণ আল্-কুরআনকে সকল মানবজাতির জন্য নির্দেশিকা বলে মন্তব্য
করা হয়েছে।
২- কেউ চিংড়িকে
হারাম বলেছে- আপনি তাঁকে এবং পুরো আলেম সমাজকে গালি না দিয়ে তাঁর বা তাঁদের কাছে
যুক্তি ও প্রমাণগুলি জানতে চান। যেমন- আমি নিজে চিংড়ি খাই; আজ অবধি কোন হাদিসে এর
নিষেধাজ্ঞা খুঁজে পাইনি।
৩- আর একটা কথা,
খুব আক্ষেপের সাথে বলছি- আমাদের সমাজে কোন কিছু হলে; এক শ্রেণীর পণ্ডিত সব দায়-দোষ
আলেমদের উপর চাপায়। যেন এই সমাজের পিছিয়ে থাকার মূল কারণ মাদ্রাসাগুলো?
আচ্ছা আপনি বা আপনারা
কখনো কি ভেবে দেখেছেন- শতকরা কতজন ছেলেমেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে? চার-থেকে পাঁচ শতাংশ।
বাকি ৯৪-৯৫ শতাংশ তো ঝাঁ-চকচকে স্কুল-মিশনারি-আকাদেমিতে পড়ে, তাহলে? আর মাদ্রাসায়
কারা পড়ে একবার খোঁজ নিয়ে দেখবেন? এমন সব শিশু, যাঁদের বাড়িতে দু’বেলা খাবার জোটে
না। যার মাকে তাঁর বাবা দেখে না; অনাথ বা অর্ধ-অনাথেরা পড়ে মাদ্রাসায়। এক-দু’টো ছেলে
মেয়ে আসে মধ্য বা নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘর থেকে।
তাছাড়া (আপনাদের
মতো) বড় ঘরের ছেলেরা তো মাদ্রাসা কি- হয়তো তাও জানে না। তাহলে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে
যাওয়ার কথা ও দায়িত্ব তো আপনাদের, আমাদের। আর যদি সমাজ এখনো পিছিয়ে থাকে, তার জন্য
তো তথাকথিত বুদ্ধিজীবী সমাজ দায়ী।
৪- শেষে, আমাদের
সমাজ পিছিয়ে আছে এই তত্ত্বে আসি, আমি কিন্তু মনে করি না- আমাদের সমাজ পিছিয়ে আছে।
কারণ, অর্থে বা শিক্ষাদীক্ষায় কিছুটা বা হয়তো অনেকটাই পিছিয়ে আছে আমাদের সমাজ;
কিন্তু এখনো আমাদের সমাজে বৃদ্ধাশ্রম নেই। কোন প্রোফেসর নিজের মা-কে ছাদ থেকে ফেলে
দেয়নি। বিশেষ করে বাঙালিরা এখনো আচার ব্যবহারে বেশ বিনম্র ও বিনয়ী। মনে রাখা দরকার
শেষ নবী সা-র এই বাণী-
“আমাকে প্রেরণ
করা হয়েছে উত্তম চরিত্রকে পূর্ণতা প্রদান করার লক্ষ্যে”।
৫- আর এও মনে
রাখা দরকার, অভাব বা দারিদ্য কিন্তু পিছিয়ে থাকার কোনো সিম্বল নয়। কারণ, ক’দিন আগে
এক এম-এ পাশ ছেলে আমায় টোটো করে আমার গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিল...।
No comments:
Post a Comment