মুহ়াম্মাদ হ়ুসাইন
হাইকাল
(১৮৮৮ – ১৯৫৬
খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
উনবিংশ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত মিসরীয় আরবি সাহিত্যিক ও বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব তিনি। একাধারে লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন, যা তাঁর বহুমুখী মেধার পরিচয় বহন করে। মিশরের দাকাহলিয়া জেলার কাফরে গান্নামে ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২০শে আগস্ট এক কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের পরিবার গ্রামের মধ্যে স্বচ্ছল, সম্ভ্রান্ত এবং নেতৃস্থানীয় ছিল।
শিক্ষানুরাগী পিতার তত্ত্বাবধানে মাত্র পাঁচ বছর বয়সে গ্রামের মক্তবে ভর্তি হন। সেখানে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি কুরআনের এক তৃতীয়াংশ মুখস্থ করেন। সাত বছর বয়সে কায়রোতে ‘মাদ্রাসাতুল্ জামালিয়াহ্ থেকে মাধ্যমিক এবং খিদিভ বিদ্যালয় থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পূর্ণ করেন। তারপর আহ্মাদ লুত্ফীর পরামর্শে আইন কলেজে ভর্তি হন। এ সময়েই সাহিত্যের প্রতি তাঁর আগ্রহ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন কালজয়ী গ্রন্থ দ্বারা প্রভাবিত হন। ১৯০৯ সালে তিনি আইনে স্নাতক হন।
স্কলারশিপ পেয়ে তিনি উচ্চশিক্ষার জন্য প্যারিস যাত্রা করেন ১৯০৯ সালের ৭ই জুলাই। সেখানে আইনে ডক্টোরেট করার জন্য সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯১২ সালে দ্য ইজিপ্শিয়ান ডেব্ট (The Egyptian Debt) নামে অর্থনৈতিক বিষয়ে থিসিস লিখে পিএইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেন। উল্লেখ্য যে এখানে অধ্যয়ন কালেই বিখ্যাত উপন্যাস “যায়নাব” রচনা করেন। আরবী সাহিত্যের ইতিহাসে এটি ছিল প্রথম ও পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস।
১৯১২ সালে মিশরে ফিরে মান্সুরায় আদালতে আইনজীবী রূপে কর্ম জীবন শুরু করেন। ১৯১৩ সালে কায়রোর আদালতের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯১৭ সালে মিশর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষকরূপে যোগদান করেন। ১৯২২ সালে হিয্বুল্ আহ্রার নামে এক রাজনৈতিক দলের মুখপত্র আস্-সিয়াসাহ্ পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯২৬ সালে এর সাপ্তাহিক সংস্করণ আরম্ভ হলে তিনি তারও সম্পাদনা করেন। তারপর পরিপূর্ণরূপে সাংবাদিকতা ও রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৭, ১৯৪০ এবং ১৯৪৪ এই তিন দফায় তিন বার শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হন। সর্বোপরি ১৯৪৫ সালে মাজ্লিসুশ্ শুয়ূখ-এর সভাপতি নিযুক্ত হন। জীবনে নানাবিধ দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে পালন করে সাহিত্য জগতের এই প্রবাদ পুরুষ ১৯৫৬ সালের ৮ই ডিসেম্বর কায়রোতে পরলোকগমন করেন।
তিনি একজন প্রথম সারির মিসরীয় লেখক ছিলেন। একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদরূপে খ্যাতি অর্জন করেন। তার সাহিত্যকীর্তির মধ্যে অত্যন্ত উল্লেখযোগ্য হল— (১) যায়নাব, প্রথম আরবী উপন্যাস এবং তার সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রন্থ। ১৯১৪ সালে এটি প্রকাশিত হয়। (২) ওয়ালাদী, ১৯২৫ সালে অকালমৃত সন্তানের স্মৃতিতে রচিত এই গ্রন্থটি ১৯৩১ সালে প্রকাশিত হয়। এতে ১৯২৬ – ১৯২৮ সস্ত্রীক ইউরোপ ভ্রমণও বিবৃত হয়েছে। (৩)হ়ায়াতু মুহ়াম্মাদ, নবী (সাঃ)-এর ঐতিহাসিক ও বিশ্লেষণধর্মী জীবনী গ্রন্থ। ১৯৩৫ সালে প্রকাশিত হয়। এছাড়াও সাওরাতুল্ আদাব, ফী মান্যিলিল্ ওয়াহী, আল্-হুকুমাতুল্ ইস্লামিয়্যাহ্ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তাঁর বিভিন্ন রচনায় নারী স্বাধীনতার সুর লক্ষ করা যায়। এছাড়াও মিশরীয় জাতীয়তাবোধ, স্বদেশপ্রেম ও গর্ব তাঁর রচনার অন্যতম বিষয় ও উপজীব্য। তাঁর রচনায় মিসরীয় সাহিত্যের সঙ্গে পাশ্চাত্য সাহিত্যের সমন্বয় সাধনের চেষ্টা দেখা যায়। আবার কিছু গ্রন্থে আরবী সাহিত্যের নবজাগরণের ভাবধারা পরিলক্ষিত হয়। সার্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, গতানুগতিক পথ ছেড়ে তাঁর রচনা ও সাহিত্যে ভিন্নমুখীতা লক্ষ করা যায়, যা আরবী সাহিত্যের পরিধিকে প্রশস্ত করেছে।
No comments:
Post a Comment