Monday 8 January 2018

তাওফীক আল-হাকীম


তাওফ়ীক় আল্‌-হ়াকীম
(১৮৯৮ – ১৯৮৭ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ
তিনি একজন মিসরীয় সাহিত্যিক ও লেখক। আরবী নাট্য সাহিত্যে তাঁর অবদান অসামান্য। বিশেষতঃ আরবী সাহিত্যে আল্‌-মাস্‌রাহ্‌ আজ়্-জ়েহ্‌নী–এর প্রবর্তক তিনিই। তাঁর প্রকৃত নাম তাওফ়ীক় ইস্‌মা'ইলল্‌-হ়াকীম১৮৯৮ সালে ৯ই অক্টোবর আলেকজান্দ্রিয়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা ছিলেন মিসরীয়। আর মা ছিলেন তুর্কী। তাঁর পিতা এক কোম্পানিতে চাকরী করতেন। 
 
প্রতিপালনঃ
তাঁর মা তাঁকে তাঁর সমবয়সীদের সঙ্গে মিশতে দিতেন না। সর্বদা তাঁদের থেকে আলাদা রাখতেন। হয়তো এ কারণেই তিনি তাঁর অভ্যন্তরীণ জগতের মধ্যে ঘরাফেরা করতেন। সাত বছর বয়সে তাঁকে দামানহুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। অতঃপর পিতা তাঁকে ১৯১৫ তে বুহাইরার সরকারী বিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। সেখান থেকে কিছু দিন পর তিনি তাঁর পিতৃব্যদের সঙ্গে কায়রো যান। আর সেখানে মুহাম্মদ ‘আলী বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক স্তরের পাঠ সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিকের পর তিনি সঙ্গীত ও নাট্য সাহিত্যের প্রতি আকৃষ্ট হন এবং তাঁর মনে সাহিত্য অনুরাগ প্রতিপালিত হতে থাকে।   
 
উচ্চশিক্ষা লাভঃ
১৯২১ সালে তিনি স্নাতক হন। তারপর পিতার ইচ্ছানুযায়ী আইন মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিছু দিন পরে সরকারী অর্থে উচ্চশিক্ষার জন্য প্যারিস যাত্রা করেন। ডক্টরেট করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। প্যারিসে তিনি বিভিন্ন থিয়েটার ও সিনেমা ঘরে যেতেন। এভাবে তিনি বিশ্ব সাহিত্য ও ইউরোপীয় সাহিত্য, কলা ও শিল্প সম্পর্কে বিশদ ধারণা লাভ করেন।  
 
কর্মব্যস্ততা ও মৃত্যুঃ
প্যারিসে শিল্পসাহিত্য চর্চার দরুন তাঁর গবেষণা ব্যাহত হয়। এ কারণেই পিতা তাঁকে মিসর ডেকে পাঠান। তিনি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন না করেই শূন্য হাতে মিশর ফিরে আসেন। অতঃপর আলেকজান্দ্রিয়ার প্রশাসনিক দপ্তরে কাজে যোগ দেন। কিছু দিন পরে তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ে ইন্সপেক্টর পদে উন্নীত হন। অতঃপর তিনি একাধারে সরকারের নাট্য ও সঙ্গীত বিভাগ, সামাজিক জনকল্যাণ বিভাগ ও দারুল্‌ কুতুব আল্‌-মিস্‌রিয়্যাহ্‌ (মিশরীয় গ্রন্থাগার)-এর পরিচালক নিযুক্ত হন। অতঃপর তিনি আরবী ভাষা পরিষদের সদস্য হন। ১৯৫৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত ইউনিস্কোর সম্মেলনে তিনি মিশরের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৭৫ সালে মিশরের শিল্প-কলা আকাদেমির পক্ষ থেকে তাঁকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এভাবে সাহিত্য ও শিক্ষার সাধনায় সারা জীবন লিপ্ত থেকে ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জুলাই কায়রোয় ইহলোক ত্যাগ করেন।     
 
তাঁর রচনার বৈশিষ্ট্যঃ  
 তিনি বাস্তবের সাংকেতিক পন্থাকে এক অভিনব স্টাইলে মিলিয়ে দিয়েছিলেন। কোনও প্রকারের জড়তা ও অস্পষ্টতা ছাড়াই তাঁর রচনায় কল্পনা ও গভীরতা লক্ষ করা যায়। আর এর জন্যই তিনি খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছেছিলেন। তিনি অতিরঞ্জন অপছন্দ করতেন। তিনি বহু নাটক রচনা করেছেন। তবে তাঁর অধিকাংশ নাটক জনসাধারণের উদ্দেশ্য মঞ্চস্থ করা সম্ভব্যপর নয়। তাঁর এ ধরণের নাটকগুলিকে আল্‌-মাস্‌রাহ্‌ আজ়্-জ়েহ্‌নী নামে অভিহিত করা হয়। আরবী সাহিত্যে তিনিই প্রথম এ পথের সূচনা করেন। তাঁর এ নাটকগুলির মাধ্যমে পাঠককূল তদানীন্তন মিসরের আর্থসামাজিক অবস্থা সম্পর্কে ধারণা লাভে সক্ষম হন।
 
রচনার উপজীব্যঃ
তিনি মিসরের প্রাচীন ইতিহাস হতে তাঁর রচনার বিষয়গুলি গ্রহণ করেছেন। বিশেষ করে ফারাও, রোমান, কিবতি ও মুসলিমদের শাসনামলে মিশরের অবস্থা ও ইতিহাসের কথা তুলে ধরেছেন। এছাড়া তিনি তাঁর নাটক ও উপন্যাসে বিষয় ও চরিত্রগুলিকে তাঁর সমকালীন মিসরের সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তব চিত্র হতে গ্রহণ করেছেন। 
 
তাঁর রচনাসমূহঃ
তিনি প্রায় ১০০টি নাটক রচনা করেছেন। তার মধ্যে বিখ্যাত কয়েকটি নাটক হল আহ্‌লুল্‌ কাহাফ, শাহার্‌যাদ, আল্‌-মালিক ওয়ায়দীব, আস্‌-সুল্‌তানুল্‌ হায়ের, লু'’বাতুল্‌ মাওত। তিনি ক’টি উপন্যাসও লিখেছেন, যেমন— ‘আওদাতুর্‌ রূহ, ‘উস্‌ফূরুম্‌ মিনাশ্‌ শার্‌কি। নাটক উপন্যাসের পাশাপাশি বেশ কিছু ছোটগল্পও রচনা করেছেন। তাঁর লেখা বিখ্যাত ছোটগল্প হল— আরিনী আল্লাহ্‌, লায়লাতু যিফাফ, ‘আহ্‌দুশ্‌ শায়তান। এছাড়া তাঁর বেশ কিছু বই ও প্রবন্ধও রয়েছে।

No comments:

Post a Comment