বাবা, তুমি কি ডাকো আমায়
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
আজ আরও এক ধাপ উঁচু হয়ে গেল
আমাদের মাঝের দেওয়ালটি
ব্যবধানের রেখাটি আরও একটু চওড়া
হল
প্রকৃতির অমোঘ পার্টিশনের
একপ্রান্তে তুমি অপর প্রান্তে আমি।
আজ তুমি কেমন আছো, জানি না
কিন্তু কেমন ছিলে, আজ বড্ড বেশি
মনে পড়ে।
যতদূর মনে পড়ে সেই ছোটবেলার কথা
তুমি খুব বেশি দিন আমায় স্কুলে ছাড়তে
যাওনি
হতে পারে তোমার ব্যস্ততার দরুন
আবার এও হতে পারে, তুমি আমায় বড্ড
বেশি ভালবাসতে
তাই স্কুলে রেখে আসতে কষ্ট হবে ভেবে
যাওনি, থাক সে কথা।
কিন্তু বাকি দুই ভাইয়ের চেয়ে
তুমি যে আমায় বেশি ভালোবাসোতে
তা আমি হলফ করে বলতে পারি।
একবার তোমার চরম অসুখ করেছিল
বিছানায় শুয়েই আমার মাথা হাত
বোলাতে
আমাকে জীবনে কি করা উচিৎ কি
উচিৎ নয় বোঝাতে
স্কুল থেকে ফিরে আমি ছুটে যেতাম
তোমার ঘরে
পাশে বসিয়ে আমায় ভালো মানুষ
হওয়ার দীক্ষা দিতে
সেই স্মৃতিগুলি আজ আবছা আবছা
মনে পড়ে।
কিছু দিন পর তোমার অসুখ সেরে
গেল
কিন্তু আগের মতো সংসারকর্ম আর সম্ভব হচ্ছিল না তোমার পক্ষে
সারাক্ষণ শুধু বাবু বাবু করে
সমস্ত বাড়ি মাথায় তুলে রাখতে
মুহূর্তের জন্য তোমার চোখের
আড়াল হলে
সারা পাড়া চষে বেড়াতে আমার
খোঁজে।
একদিন আমি পুকুরে স্নান করছি
তুমি সেখানে পৌঁছে পুকুর পাড়ে
বসে থাকলে
স্নান শেষে আমায় হাত ধরে পাড়ে
টেনে তুললে
গামছা দিয়ে মাথা মুছিয়ে বাড়ি
নিয়ে গেলে।
জানো বাবা, এই কনকনে শীতে
আজ পুকুরে নামতে বড্ড ইচ্ছে করছে;
যদি তুমি আসো, হাত ধরে পাড়ে
টেনে তোলো
মাথায় হাত বুলিয়ে শীতে জলে
নামতে বারণ করো, এই আশায়।
তুমি কি পারো না প্রকৃতির এই
অমোঘ পার্টিশনকে ভেঙে
একবার আসতে, আমায় একবার দেখে
যেতে
কেমন আছি? কত বড় হয়েছি?
এসব জানতে ইচ্ছে করে না তোমার!
পুনশ্চঃ তুমি ও মা আমায় বাবু
বলে ডাকতে
চার বছর হল ওই ডাক শুনিনি
মাও আজ আর ডাকে না ওই নামে
তুমি কি ডাকো? কই আমি শুনতে পাই
না তো!
২৪/১২/২০১৫ ইং
তপসিয়া, কোলকাতা
No comments:
Post a Comment