Thursday 24 November 2016

একদিন লিফটে...

একদিন লিফটে...
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম   
    প্রায়শই, কাকভোরে উঠে ‘প্রার্থনা’ সেরে কোনওদিন ঘুমিয়ে পড়ি আবার কোনওদিন একটু আধটু পড়াশুনা করার চেষ্টা করি। যা-ই করিনা কেন, স্নান-খাওয়া সেরে বিলম্বে ক্যাম্পাস পৌঁছানোটা আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। সেদিনও প্রায় একরকম ছুটতে ছুটতেই ক্যাম্পাসে ঢোকা। রৌদ্রে ছুটে গেছি বলে খানিকটা ক্লান্ত। তাই সিঁড়ি বেয়ে না উঠে, কয়েকজন ছেলেমেয়ের সঙ্গে লিফটে উঠলাম।
    আমি একজন বাঙালি মুসলিম। এ দু’য়ের সুবাদে বেশ নিয়ন্ত্রিত-মার্জিত রুচির। তবুও, আড়চোখে আমার চারিপাশে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। বাম পাশের মেয়েটির ওপর চোখ পড়তেই নিজেকে কেমন একটু বিচলিত মনে হল। মুহূর্তের মধ্যেই ‘ধর্ম ও সংস্কৃতি’-র যৌথ প্রয়াস আমার চোখকে নিচু করে দিল। কিন্তুপরক্ষনেই দৃষ্টি যেন আপনাআপনিই তার প্রতি নিবদ্ধ হয়ে পড়ল- মুখশ্রীটা মনে ধরার মতোই ছিল। দেহাবয়ব অতি চমৎকার। অতি স্বল্প বসনা। পায়ে পেন্সিল হীল। আধ-ঢাকা নিটোল পেলব উরুদেশ। কোমরে পোশাকের সঙ্গে মানানসই একটা বেল্ট। ডান হাতে বাহুর খানিকটা ওপরে সূর্যাকৃতির একটা ট্যাটু। একটু বামে, দর্পণ ন্যায় স্বচ্ছ বক্ষস্ফীতি উঁকি মারছে। হরিণীগ্রীবা বেয়ে ঝুলে আছে একগুচ্ছ নাতিদীর্ঘ কেশরাশি, যার কিছুটা অর্ধপ্রকাশিত বিভাজিকাকে আবছা আড়াল করে রেখেছে। এসব দেখে মাথাটা কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। সাহিত্য পড়ার সময় মনে কত ছবি এঁকেছি- বাংলায় ‘বনলতা সেন’ থেকে ‘ইরানী বালিকা’, আরবীতে ‘ওয়াহিদা’, ‘উনাইযা’ থেকে শুরু করে নাওয়ার পর্যন্ত। সব কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। এক লহমায়, শাড়িপরা বঙ্গতনয়া ‘দুর্গা’ ‘অপুর সংসার’ ছেড়ে ‘প্যারিসে এক সন্ধায়’ বিকিনিগার্ল ‘দীপা’ হয়ে গেল। এরই মধ্যে লিফট তৃতীয় তলায় পৌঁছে গিয়েছিল, লিফট থেকে নেমে গুটিগুটি পায়ে শ্রেণীকক্ষের দিকে অগ্রসর হলাম।   

    হলফ করে বলতে পারি, তার সৌন্দর্যে আমি বিন্দুমাত্র মুগ্ধ হইনি। সেদিনই ‘h****e’ ও ‘b**d’- এর প্রকৃত অর্থ ভালো ভাবে রপ্ত করতে পেরেছিলাম। তবে সেই দিন থেকে মনে একটি প্রশ্ন বিঁধে রয়ে গেছে-  আমার দৃষ্টিভঙ্গির এই পরিবর্তনের জন্য দায়ী কে...?   

নয়নাভিরাম 

No comments:

Post a Comment