Thursday 24 November 2016

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ ঠাণ্ডা খাবার

ঠাণ্ডা খাবার

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

মার্চ মাস মানেই অফিসগুলিতে বাড়তি ব্যস্ততা। অতিরিক্ত কাজের চাপ। তাই মার্চ-এপ্রিল এই দুটো মাস অফিসে ছুটি হতে স্বাভাবিক ভাবেই দেরী হয়। আর সাহিলের বাড়ি ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। আজ তো অফিস থেকে বেরিয়ে গাড়ি পেতেই প্রায় ঘণ্টা খানেক পেরিয়ে গেলো। যদিও একটা বাস পেল তো সাইন্সসিটি অবধি। সেখান থেকে অন্য একটা বাসে করে হিন্দু গোবরা। সেখানে নেমে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলো। কিন্তু একটাও খালি অটো পেল না। বাধ্য হয়েই হাঁটতে আরম্ভ করলো। বাড়ি পৌঁছল সওয়া-এগারটায়।

দশটা নাগাদ সুমাইয়া টেক্সট করেছিল, আজ ওর প্রচণ্ড মাথা ধরেছে, ফলে ও এবং সাবিল তাড়াতাড়ি খেয়ে ভেতর থেকে লক করে শুয়ে পড়েছে। সিঁড়ি বেয়ে উঠে সাহিল ব্যাগ থেকে চাবি বের করে দরজা খুলল। হলের লাইটটা অন করে সোফার উপর ব্যাগটা রেখে আস্ত করে দরজা দিয়ে উঁকি মারল, সাবিল আর ওর মা দুজনেই বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। সাহিল জামাকাপড় ছেড়ে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হল। তারপর অযু করে এশার নামায পড়ল। মুসাল্লাটা তুলে রেখে ডাইনিংয়ের কাছে গিয়ে দেখল, সুমাইয় ডাইনিং টেবিলের উপর সব খাবার সাজিয়ে রেখেছে। তার জোর খিদে পেয়েছে। তাই তড়িঘড়ি বেসিনে হাত ধুয়ে থালায় ভাত, ডাল বেড়ে নিলো। থালার এক পাশে দু পিস মাংস, একটু আলু ভাজা আর অল্প একটু আলু ভর্তা। তারপর ডাল-ভাত মাখতে গিয়ে দেখল, খাবারটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ঠাণ্ডা খাবার সে একদমই খেতে পারে না। উঠে গিয়ে যে গরম করবে, ইচ্ছে করছে না...   

দশ বছর আগের কথা, চাকরিতে প্রথম জয়েন করেছে সেপ্রচুর চাপ অফিসে। মাঝে মাঝেই ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। একদিন তো ফিরতে অনেক দেরী হয়ে গেলো। পৌনে-বারোটা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখল, মা সোফায় বসে ঝিমুচ্ছে। ছেলের আওয়াজ পেয়ে মা’র তন্দ্রা কেটে গেলো। বলল— বাবু, আজ এত দেরী হল ফিরতে! তুই মুখ হাত ধুয়ে আয়। আমি খাবার নিয়ে আসছি। 

সাহিল মুচকি হেসে উত্তর দিল— আচ্ছা মা, এত রাত হল, তুমিও তো শুয়ে পড়তে পারো! ফিরে এসে আমি নিজে খাবার বেড়ে খেয়ে নেবোএত চিন্তা করার কী আছে

মমতা ভরা এক হাসি দিয়ে মা বলল— যতক্ষণ না তুই বাড়ি ফিরে খেয়ে দেয়ে ঘুমোতে যাস, আমার ঘুম আসে না, কী করবো বল্‌?

— আচ্ছা মা, তুমি খেয়েছো? খাওনি তাই না! চলো একসঙ্গে খাবো...   

— দাঁড়া বাবা, আমি খাবারটা একটু গরম করে আনি। তুই তো ঠাণ্ডা খাবার খেতে পারিস না

— আচ্ছা মা, ততক্ষণে আমি তাহলে মুখ-হাত ধুয়ে আসি।   

হঠাৎ করে তার মনে পড়ে গেল এসব কথা, কীভাবে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত মা তাঁর জন্য অপেক্ষা করতো, টেবিলে খাবার নিয়ে বসে থাকতো, মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠল মায়ের অপেক্ষমাণ ছবিটা। গলাটা বুজে আসলো তার। ইচ্ছার বিরুদ্ধে, ক্ষুধার জ্বালায় কোনোরকমে এক লুকমা ঠাণ্ডা খাবার মুখে তুলল। কিন্তু তা গলাধঃকরণ করতে পারল না।

 

২১-০৯-২০১৬

কোলকাতা-৩৯

No comments:

Post a Comment