Wednesday 16 November 2016

প্রাচীন সভ্যতায় নারীঃ কিছু কথা

প্রাচীন সভ্যতায় নারীঃ কিছু কথা 

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম 

নারী, করুণা ও বাৎসল্যের এক অপরূপ মূর্তি । তাইতো সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে সম্বন্ধ ও আত্মীয়তার বৃত্তটি নারীকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়- গ্রাম্য সমাজে কথিত আছে, শৈশবে নানীর বাড়ি, মধ্যবয়সে শ্বশুর বাড়ি আর শেষ বয়সে মেয়ের বাড়ি । আর ইতিহাসের এই সুদীর্ঘ যাত্রাপথেও দেখা যায়, নারী মাতারূপে সন্তান-প্রতিপালনে সর্বস্ব উৎসর্গ করছে কোথাও, তো কোথাও অর্ধাঙ্গিনী সেজে জীবনের উত্থান-পতনে পুরুষকে সর্বত সাহায্য করে চলেছে, আবার অন্য সন্তানেরা যখন বৃদ্ধ মা-বাবার সেবায় অমনোযোগী তখন যাবতীয় প্রতিকূলতাকে জয় করে মেয়েই তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে । কিন্তু সমাজ তাঁকে যথাযথ মূল্য দেয়নি । লক্ষ্য করা যায়, কোথাও সে শুধুই সেবিকা, তো কোথায় দাসী ।  আবার কোথাও তাঁকে ক্রয়-বিক্রয় করা হয়েছে, এমনকি হচ্ছেও চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় । কোন কোন সভ্যতা ও ধর্মে মালিকানা ও উত্তরাধিকার হতে সে বঞ্চিত  আবার কোনো সভ্যতায়- সে যেন পাপ, পঙ্কিলতা ও লাঞ্ছনার প্রতিমূর্তি । ব্যক্তিত্ব-গঠন ও বিকাশের কোন সুযগই তাকে দেওয়া হয়নি । কোন সমাজে তাকে গ্রহণ করা হয়েছে শুধু মাত্র পাশবিক প্রবৃত্তির খোরাকরূপে। কেউ কেউ আবার তাঁকে ‘শয়তানের প্রতিনিধি’ আখ্যায়িত করেছে। নিম্নে নারী সংক্রান্ত দু’ একটি সভ্যতার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরলাম । যা থেকে সহজেই অনুমেয় যে, ইসলাম-পূর্ব যুগে নারীর কি করুণ অবস্থা ছিল ।   
গ্রীস সভ্যতা অতীতের সর্বাপেক্ষা গৌরবময় সভ্যতা । এই সভ্যতায় সামাজিক আচারআচরণের দিক দিয়ে নারীর মর্যাদা ছিল অত্যন্ত করুণ । তাদের দৃষ্টিতে, নারী একটি নিকৃষ্ট জীব । সামাজিক ক্ষেত্রে তাঁর কোন মর্যাদা ও অধিকার ছিল না।
রোমান সভ্যতা পৃথিবীর একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ সভ্যতা । এই সভ্যতার চরম সমৃদ্ধির যুগে পুরুষকে পরিবারের সর্বময় কর্তা গণ্য করা হত। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সে নিজ স্ত্রীকে হত্যা করবার অধিকারও পেতো নৈতিক-চরিত্র ও সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত শিথিল হয়ে পড়েছিল । কামপ্রবণতা, নগ্নতা ও অশ্লীলতায় গোটা রোমান সমাজ ডুবে ছিল। সে যুগে ফ্লোরা নামে এক ক্রীড়ার প্রচলন ছিল; যাতে উলঙ্গ নারীদের দৌড় প্রতিযোগিতা হত । এছাড়া নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের একত্রে স্নান প্রথাও  প্রচলিত ছিল
খ্রিস্টীয় ইউরোপে ধারণা পোষণ করা হতো- নারী পাপের মুল উৎস এবং নরকের দ্বার। পুরুষের উপরে যাবতীয় দুঃখ-দুর্দশার পাহাড় নেমে আস নারীর কারণে । তাই নারীর জন্ম লজ্জার স্বরূপ। এমনকি তার সৌন্দর্যকে শয়তানের মারণযন্ত্র গণ্য করা হত। এও মনে করা হতো, জগতবাসীর জন্য যাবতীয় অভিশাপের কারণ নারীই । সমগ্র ইউরোপে  নারী সংক্রান্ত যে খ্রিষ্টীয় বিধানের প্রচলন ছিল তা নিম্নরূপের-  
(ক) মালিকানার কোন অধিকারই ছিলনা । সকল বিষয়ের  উপর পূর্ণ কর্তৃত্ব ছিল শুধু পুরুষের।
(খ) সম্পর্ক চরম তিক্ততায় পৌঁছে গেলেও বিবাহ বিচ্ছেদের কোন রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হত না নারীকে। তবে কখনো কখনো বিচ্ছেদের অনুমতি এই শর্তে দেওয়া হত যে, সে আর দ্বিতিয়বার বিবাহ করতে পারবে না ।
(গ) স্বামী স্ত্রীর একজনের মৃত্যুর পর অপরজনের পুনরায় বিবাহ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও পাপজনক ছিল।
আলোচিত এই ক’টি উদাহরণ হতে প্রাচীন যুগে নরীর অবস্থা কেমন ছিল তা সহজেই অনুমান করা যায় । 

ভারতীয় সমাজ-  স্তন ঢাকতে কর দিতে হতো দলিতদেরকে

No comments:

Post a Comment