Thursday 17 November 2016

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ বিস্তর ফারাক

বিস্তর ফারাক   

আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

জুন মাসের ভরদুপুর, বাতাসকে লু শাসন করছে সূর্যের প্রচণ্ড তাপে রাস্তাঘাট রীতিমত ফুঁসছে। বন্ধু সাহিল জরুরী তলব করেছে যেতেই হবে দেখা করতে তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাগির বেরিয়ে পড়ল হাজি মহসিন স্কোয়ারের গেটে সাহিলের থাকার কথা গিয়ে দেখল, সে আসেনি ফোন করলো তাকে সাহিল উত্তরে জানালো, সে মল্লিক বাজারের কাছে একটা জরুরী কাজে ফেঁসে গেছে তার পৌঁছতে প্রায় আরও এক ঘণ্টা লাগবে।  

সাগির ফোনটা রেখে বিড়বিড় করে উঠলো, “অসহ্য, দুপুর বেলা এই গরমে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা যায়! এই ছেলেটা শুধরালো না হঠাৎ তার ঠোঁটে বিজয়-হাসির উঁকিঝুঁকি এক মুহূর্তও বিলম্ব না করে, পাশেই মিস্‌রি গলি মসজিদ, সেখানে চলে গেল। মসজিদে ঢুকে এক পাশে গিয়ে পাখা চালিয়ে বসলঅপেক্ষার মুহূর্তে তো আবার ৯০ সেকেন্ডে মিনিট হয় পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে ড. ওবাইদুর রহমান বুখারির একটা পোস্ট পড়তে লাগলো...

মদিনায় নবীর (সা) মসজিদ। অত্যন্ত পবিত্র। সবে নামায শেষ হয়েছে। সহচরদের দিকে মুখ ফিরে বসে রয়েছেন মুহাম্মদ (সা)। মসজিদে আবু বাক্র, উমার, উসমান, আলি ও অন্যান্য বিদগ্ধ সাহাবারাও (রা) রয়েছেন। এমন সময় এক বেদুঈন মসজিদে ঢুকে এক প্রান্তে পেচ্ছাব করতে আরম্ভ করলো। কিছু সাহাবা রে রে করে ছুটে গেলেন তার দিকে। অনেকে রাগে ফুঁসতে আরম্ভ করেছেন তাকে ধরে মারবেন বলে স্থির করে ফেলেছেন অনেকে কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালেন খোদ নবীজি (সা)। বললেন, ‘ওকে পেচ্ছাব করতে দাও’। বেদুঈনের পেচ্ছাব করা হয়ে গেলে এক বালতি জল আনিয়ে নবীজি (সা) নিজ হাতে তা ঢেলে দিলেন ধুয়ে দিলেন সেই জায়গাটুকু তারপর বেদুঈনকে কাছে ডেকে বোঝালেন, “এটা আমাদের অত্যন্ত পবিত্র জায়গা এখানে আমরা ইবাদত করি বেদুঈন নবীজির এই কথা শুনে লজ্জা পেল নবীজির সহিষ্ণু ও বিনম্র আচরণে সে বিস্মিত ও মুগ্ধ...     

এরই মাঝে কখন যে এক দীর্ঘকায় ব্যক্তি, খালি গা, লুঙ্গিটা হাঁটু পর্যন্ত ওঠানো, মুখে বাহারি গোঁফ তার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে বুঝতেই পারেনি পাখাটা বন্ধ করে দিয়ে সাগিরের দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে সে বলল, “মাস্জিদ মেঁ পাঙ্খা সির্ নামায কে ওয়াক্ত চালায়া জায়েগা আভি আপ জাও ইহাঁ সে আওর আগার ব্যায়ঠ্না হ্যায় তো পাঙ্খা বান্দ কার্কে ব্যায়ঠ্না পাড়েগা যিম্মেদারান্ কা হুক্ হ্যায়

তার এসব কথা শুনে এবং অমন রূঢ় আচরণে ক্ষোভে অভিমানে সাগিরের চোখ ফেটে অশ্রুধারা নেমে আসলোনানা কথা খুবলে খেতে লাগল তার মনকে আমরা-ওরা’র মাঝে যে এক বিশাল প্রশান্ত মহাসাগর বিরাজ করছে, কেতাবের ইসলাম ও সমাজের ইসলামের যে বিস্তর ফারাক তা আজ তার কাছে অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেলো ওই লোকটার চলে যাবার পর কী ভেবে সাগির মসজিদের অপর প্রান্তে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল, ই লোকটা যেখানে বসে আরেকজনের সাথে গল্প করছিল সেখানে পাখাটা তখনও ঘুরছে দুজনের কেউই তা বন্ধ করেনি

১৫-১১-২০১৬

কোলকাতা-৩৯ 

1 comment: