নারী ও সংসার-১
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
আমার মা, বেশি লেখা পড়া শেখেননি।
ক্লাস টু’য়ের পাঠ কোনরকমে সম্পন্ন করেছিলেন। তারপরেই বিয়ে, সংসার, সন্তান-প্রতিপালনে
কেটে গেছে বহু বছর। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও মা’য়ের মধ্যেও ‘নক্সি-কাঁথা’-র
সংস্কার ছিল। মা নিজ হাতে সুতো দিয়ে কীসব লিখে দেওয়ালে টাঙাতেন। আর বাবা রোজ আমায়
সেগুলো পড়ে শোনাতেন। বাবা চলে গেছেন না-ফেরার দেশে, বেশ কয়েক বছর আগে। মা’ও আর
নতুন কিছু লেখেন না। বলতে গেলে, টাঙ্গন দিয়ে গড়িয়ে গেছে বহু জল। তবে, এত বছর পরেও
মায়ের হাতের লেখা ক’টা লাইন আজও কেমন মনের মধ্যে গেঁথে রয়েছে- ‘সংসার সুখী হয়
রমণীর গুণে, সংসার নরক হয় নারীর কারণে’। এখন প্রতিনিয়ত চোখের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেই লাইনের সত্যতা। বাস্তবই, এ
জগত সংসার মুখরিত নারীর গুণে; জীবনের যাবতীয় সজীবতা নারীকে ঘিরে; জীবনের প্রতি এত আকর্ষণ, খানিকটা হয়তো নারীকে কেন্দ্র করে। তাই আল্লামা ইকবালের
দৃষ্টিকোণকে যথার্থ বলে মেনে নিতেই হয় যে-
وجود زن سے ہے تصویر کائنات میں رنگ اسی کے ساز سے ہے زندگی کا سوز ِ دروں
পৃথিবীর সজীবতা নারীর কল্যাণে
মুখরিত এ জীবন তাঁরই দৌলতে।
(অনূদিত)
আমাদের বিদ্রোহী কবি নজরুলের চিন্তনেও প্রায় একই সূর শোনা গেছে। তিনি বলেছেন-
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
এ-বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল।
তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছ তার প্রাণ?
অন্তরে তার মমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান।
সত্যিই, জগৎসংসার ও নারী যেন একে অপরের পরিপূরক। বলতে
গেলে, নারী হল জীবন-গ্রন্থের রচয়িতা আর পুরুষ হল তার প্রকাশক।
যেন সমাজ বুনছেন... |
No comments:
Post a Comment