Thursday 24 November 2016

আবু বাকর মুহাম্মদ ইবনুল আরাবী


আবু বাক্‌র মুহ়াম্মদ ইব্‌নুল্‌ ‘আরাবী
(১০৭৬ – ১১৪৮ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
পরিচিতি ও জন্মঃ
ইব্‌নুল্‌ ‘আরাবী স্পেনের শ্রেষ্ঠ ইসলামী বিদ্বানদের অন্যতম। তদানীন্তন হাদিস বিশারদদের নয়নমণি ছিলেন তাঁর প্রকৃত নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু বাক্‌র। পিতার নাম ‘আব্দুল্লাহ্‌, পিতামহের নাম মুহাম্মদ আল্‌-মা‘আরেফী। তবে তিনি ইব্‌নুল্‌ ‘আরাবী নামেই অধিক পরিচিত। তবে তিনি বিখ্যাত সুফি ইব্‌নু আরাবী হতে ভিন্ন ব্যক্তিসেভিলায় ৪৬৮ হিজরী মোতাবেক ১০৭৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন।
 
প্রতিপালনঃ  
প্রাথমিক শিক্ষা নিজ শহরে অর্জন করেনসেখানে তিনি তাজ্‌বীদ, কেরাআত ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষালাভের জন্য আবু ‘আব্দুল্লাহ্‌ বিন মান্‌যূর ও আবু মুহাম্মদ বিন খায্‌রাজ-এর শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। অতঃপর ৪৮৫ হিজরিতে পিতাঁর সাথে সিরিয়ে যাত্রা করেন। সেখানে বিখ্যাত ফেকাহ্‌বিদ নাস্‌র আল্‌-মাক্‌দেসী ও আবুল্‌ ফাদ্‌ল বিন আল্‌-ফোরাত, অতঃপর বাগদাদে গিয়ে আবু তাল্‌হা আত্‌-তা’আলী, মিসরে আল্‌-খাল্‌‘য়ী, এছাড়া ইমাম গায্‌যালী, আবু বাক্‌র আশ্‌-শাশী ও আত্‌-তার্‌তুশী প্রমুখর সান্নিধ্যলাভ করে নিজ জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করেন।
 
কর্মজীবন ও মৃত্যুঃ
তিনি অত্যন্ত মেধাবী, সুমিষ্টভাষী ও বিনম্র স্বভাবের ছিলেন। তাই তাঁকে সেভিলার বিচারক নিযুক্ত করা হয়। বিচারকার্যে তাঁর মধ্যে দৃঢ়তা থাকায় কিছুদিনের মধ্যেই তাঁকে বিচারকের পদ হতে অপসারিত করা হয়অতঃপর তিনি শিক্ষার প্রসার  ও প্রনের প্রতি মনোনিবে করেন। ফাস শহরে ১১৪৮ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ৫৪৩ হিজরির রবিউল্‌ আওয়াল মাসে তাঁর জীবনাবসান ঘটে। অতঃপর এই শহরেই তাঁর দাফন কার্য সম্পন্ন হয়। পণ্ডিত ইব্‌নু বিশ্‌কুয়াল তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, তিনি (ইব্‌নুল্‌ ‘আরাবী) একজন ইমাম, অসংখ্য হাদিসের হাফেয, স্পেনের ওলামাদের শির্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।  
 
জাতির সংস্কারকঃ
জাতির সংস্কার কার্যে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য অনেকে তাঁকে সেই শতাব্দীর মুজাদ্দেদুল্‌ উম্মাহ্‌ (জাতির সংস্কারক) বলে ধারনা করেন। এবং এ প্রসঙ্গে তারা রাসূল (সাঃ)-এর একটি হাদিস উল্লেখ করেন, “নিঃসন্দেহে মহান আল্লাহ্‌ এই জাতির জন্য প্রত্যেক শতাব্দিতে একজন করে মহান ব্যক্তিত্বকে প্রেরণ করবেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের সংস্কার করবে। দ্বীনের ভেতরে জন্ম নেওয়া আগাছাগুলো পরিষ্কার করবে।”  
 
রচনাবলীঃ  
তিনি বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন ফিক্‌হ, উসুলুল্‌ ফিক্‌হ, কায়দুল্‌ হাদিস ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রেও তিনি অসামান্য অবদান রেখেছেন। বিতর্কিত মাসায়েল বা শরীয়তী আদেশ-নিষেধ ‘ইল্‌মুল্‌ কালাম সম্পর্কেও তাঁর ব্যাপক বুৎপত্তি ছিল। তাফ্‌সীর শাস্ত্রেও তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। সর্বোপরি সাহিত্য ও কাব্যে তাঁর অসামান্য দক্ষতা তাঁকে চিরস্মরনীয় করে রেখেছে। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন। তাঁর প্রণীত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হল— কানূনুত্‌ তাবীল, আহ্‌কামুল্‌ কুর্‌আন, আন্‌ওয়ারুল্‌ ফাজ্‌র, আন্‌-নাসেখ ওয়াল্‌-মান্‌সূখ, আল্‌-কাব্‌স ফী শার্‌হি মুআত্তা আল্‌-ইমাম মালিক, আল্‌-‘আওয়াসিম মিনাল্‌ কাওয়াসিম, ‘আরেযাজাতুল্‌ আহ্‌ওয়াজী ফী শার্‌হিত্‌ তির্‌মিজী, আল্‌-ইন্‌সাফ ফী মাসায়িলিল্‌ খেলাফ, আ’ইয়ানুল্‌ আ’ইয়ান, আল্‌-মাহ্‌সূল ফী উসুলিল্‌ ফিক্‌হ, কিতাবুল্‌ মুতাকাল্লেমীন ইত্যাদি।  

No comments:

Post a Comment