Thursday 24 November 2016

আব্দুল মাতিন ওয়াসিমঃ তানিয়ার মাতৃত্ব


তানিয়ার মাতৃত্ব
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
সালটা ২০১২  আমি তখন স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র থাকি বেকার গভঃ হোস্টেলের ৮০ নং রুমে প্রচুর বইখাতা ও জিনিসপত্র চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রুম না, আস্ত একটি জঞ্জাল-স্তূপ ওই চত্বরে একটি বিড়ালের আবাস ছিল  খুবই কিউট  তাই, আদর করে নাম রেখেছিলাম তানিয়া  নামকরণের অবশ্য একটা কারণও আছে আমাদেরই কলেজেই তানিয়া নামে একটি মেয়ে পড়ত দেখতে খুব মিষ্টি চেহারার না না, প্রেমের কোনও সম্পর্ক ছিল না সে একবার ফেসবুকে বিড়াল নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছিল তা দেখেই মশকরা করে আমরা বন্ধুরা সেই বিড়ালটির নাম রাখি তানিয়া
 
কিছু দিন পর লক্ষ করলাম, তানিয়া গর্ভধারণ করেছে তার কিছু দিন পর সে পাঁচটি ফুটফুটে ছানা প্রসব করল আর সন্তান সমেত আশ্রয় নিল আমার চৌকির তলায় এ নিয়ে আমরা অবশ্য অনেক ঠাট্টা করতাম আমার রুমমেট জোন্সের সঙ্গে
 
সেই সময় হঠাৎ করে হোস্টেল মেস কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তানিয়া কচিকাঁচাদের নিয়ে চরম সংকটে পড়ল আমরা কয়েকজন- আমি, কামিল দা, রিয়াজ, আলি, সাহেব (টাকলু), জোন্স শহিদ (ভাজিভাই) হোটেল থেকে খাবার পার্সেল এনে রুমে খেতাম; যার উচ্ছিষ্টই ছিল তানিয়ার সম্বল প্রায় দিনে রাতে খাবার জন্য দুধ আনতাম তাতে তানিয়ারও অংশ বরাদ্দ ছিল আসলে, এতে আমরাও খানিকটা আনন্দ পেতাম
 
একদিন ভাঁড়ভর্তি দুধ টেবিলের নীচে রেখে তানিয়াকে ডাকলাম সে বেরিয়ে এলো চারিদিকে একবার তাকিয়ে আলতো করে জিভ দিয়ে দুধটা চাটলো তারপর ভেতরে চলে গেল দুধটা খেল না- দেখে আমার খুব রাগ হল পরক্ষনে ভাবলাম, হয়তো খুব গরম আছে আঙুল ডুবিয়ে দেখলাম- না, গরম নেই যাইহোক, আমি ল্যাপটপে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম কিছুক্ষণ পর হঠাৎ দেখি, পাঁচটি বিড়ালছানা অল্প অল্প করে দুধ খাচ্ছে আর তানিয়া মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে
 
সেদিন, তানিয়ার মাতৃত্ব আমাকে নিজ জননীর প্রতি আরও শ্রদ্ধাশীল ও যত্নবান হওয়ার প্রেরণা দিয়েছিল কিন্তু, আমাদের চারিপাশে আজ কতশত মায়েরা বৃদ্ধাশ্রমে কালাতিপাত করছেন অথচ যুগ উন্নত সমাজ সভ্য সন্তানেরা শিক্ষিত তবুও...!   

No comments:

Post a Comment