Monday 3 December 2018

দারিন তাতুরঃ কবি যখন গরাদের পেছনে...!


বন্দীশালায় দেখা পেয়েছি আমি অগণিত মানুষের
এতজন যে হিসেব কষা যায় না তাদের
আমি সেখানে দেখা পেয়েছি হত্যাকারীর, অপরাধীর
দেখা পেয়েছি চোর  মিথ্যুকের
আরও দেখা পেয়েছি সত্যবাদীর পাশে অবিশ্বাসীর
বিপথগামীর পাশে দিশেহারা লোকেদের
দেখা পেয়েছি শয়তান  ক্ষুধার্তদের
এছাড়া সেখানে, গরাদের পেছনে
আছে দেশপ্রেমে আক্রান্ত বহু রোগী
যারা জন্মেছে নির্যাতনের গর্ভে
এগিয়ে চলেছে অজস্র নিপীড়নের চোখে চোখ রেখে;
আরও এগিয়ে যাবে, যতদিন না ফিরে যায় শৈশবে
যেখানে লঙ্ঘিত হয়েছিল তাঁদের নিষ্কলুষতা;
ধরণীর বাধ্যবাধকতায় এখন নিস্তব্ধ তাঁরা
তাঁদেরও যে বয়স বেড়ে গেছে এখন
শুধু বয়স নয়, বেড়ে গেছে তাঁদের দুঃখগুলো
দুর্বিষহ হয়েছে তাঁদের জীবন
যদিও তাঁরা প্রতিটি নিপীড়নের সাথে
ক্রমশ হয়েছে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর;
যেমন করে দৃঢ় হয় গোলাপ লবনাক্ত মাটিতে
হয়তো তাই, নির্ভয়ে আলিঙ্গন করেছে তাঁরা ভালোবাসাকে
 ভূখণ্ডের প্রতি আমাদের ভালোবাসা সীমাহীন
 ঘোষণাই তাঁদের অপরাধ হয়েছে, ইদানীং 
এছাড়া আর  কী-বা করেছে তাঁরা, নিজেরাই তা জানে না
জানে না, তাঁদের প্রেমই হয়েছে তাঁদের অপরাধ;
তাই অন্যান্য প্রেমিকদের ন্যায়
তাঁরাও এখন বন্দীশালায়
এজন্যেই, আমিও শুরু করেছি জিজ্ঞাসাবাদ
নিজ মনের সাথে, সন্দেহ  হতাশার প্রতিটি মুহূর্তে-
মন আমার, কী সম্পর্ক তোমার আর অপরাধের?
আমি যে বুঝি না এখন অর্থ এসবের’
উত্তরে সে শুধু একটা কথাই বলে-
‘নিজ ভাবনাগুলোকে খুবলে খুবলে 
লিখেছ তুমি চলমান অন্যায়ের বিরুদ্ধে
কালির সদিচ্ছায় এঁকেছ সে-চিত্র,
নিজের লেখা কবিতায়।’
 অভিযোগেই ঢাকা পড়েছে আমার শরীর, আপাদমস্তক;
আমি যে কবি, এক শিল্পময় ভূখণ্ডের সন্তান
তাই এখন বন্দী ওদের কারাগারে;
ওদের কাছে আমার শব্দেরা অপরাধী
কলম আমার আগ্নেয়াস্ত্র, আমার হাতিয়ার
হৃদয়ের রক্তিম অনুভূতিগুলিই লেখার কালি আমার
যা দিয়ে এঁকেছি নিপীড়নের নানা চিত্র কবিতার ক্যানভাসে
আর সে-কবিতাকেই গড়ে তুলেছে তারা
সাক্ষীরূপে আমার বিরুদ্ধে
শোনো, আমার ভাগ্য, আমার জীবন!
বিচারক যা বলছেন, তুমি শোনো সে-কথা;
একটি কবিতার জন্য  আজ আমি অভিযুক্ত
সে-কবিতাই আমার অপরাধ, আমার দুষ্কর্ম;
এই শিল্পময় ‘স্বাধীন’ ভূখণ্ডে
শিল্পীরা এখন বন্দী কারাগারে

[ছত্রিশ বর্ষীয় ফিলিস্তিনি কবি-চিত্রগ্রাহক-সমাজকর্মী দারিন তাতুর ২০১৫-তে নিজের লেখাক্বাবিম ইয়া শাবি ক্বাবিমহুম’ (প্রতিহত করো হে আমার জাতি, তুমি প্রতিহত করো তাদের) কবিতাটি ইউটিউবে পাঠ করেন। মুহূর্তের মধ্যে গণমাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়ে সেই ভিডিও শুরু হয় বিতর্ক। চলতে থাকে মন্তব্যের পর পালটা মন্তব্য। এক পর্যায়ে বন্দী হন তিনি, উক্ত কবিতায় সন্ত্রাসকে উস্কে দেওয়া সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগে। রাখা হয়আল্‌-জামাহ্‌’ কারাগারে। সেখানেই লেখেনশায়েরাতুম্‌ মিন্‌ ওয়ারায়িল্ক্বুয্‌বাননামের এই কবিতাটি কবিতাটিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। অনূদিত হয় বিভিন্ন ভাষায়। তারিক আল্‌-হায়দার এর ইংরেজি অনুবাদ করেন। আর তা স্থান পায় ইংল্যান্ড থেকে প্রকাশিত নাওমি ফোয়েলি- বহুল চর্চিত ব্লেড অব গ্রাসগ্রন্থে।]

[শব্দের মিছিলনভেম্বর ৩০২০১৮-তে প্রকাশিত]


شاعرة من وراء القضبان 

دارين طاطور


في السجن قابلت أناسًا

لا رقم لها بل لا تحصى…

وهناك القاتل والجاني…

وهناك السارق والكاذب…

وهناك الصادق والكافر…

وهناك الضائع والحائر…

وهناك المجرم والجائع…

وهناك المرضى بالوطن

قد جاؤوا من رحم الألم

عاشوا مع كل الظلم…

حتى أن صاروا أطفالاً واغتصبت كل براءتهم

وانصدموا من قهر الدنيا

كبروا…

بل كبرت احزانًا…

قد عظمت مع كل الكبت…

كالورد في تربة ملحٍ

واعتنقوا الحب بلا خوفٍ…

وكان الذنب إذ قالوا

نحب الوطن بلا حدِّ…

ما عرفوا ابدًا ما فعلوا…

فصار العشق جريمتهم

والسجن مصير العشاق

وبدأت أحاور في روحي

في لحظة شكيِّ وشرودي

ماذا عن جرمك يا نفسي

لا أعرف معناه الآن…!؟

الشيء الواحد قد قلته

أني أفصحت بأفكاري

فكتبت عن الظلم الجاري…

خططت بحبري أهاتي…

بقصيدة شعر أكتبها…

التهمة قد لبست جسدي

من أخمص قدمي للرأسِ

فأنا شاعرة في السجن

شاعرة من بلد الفن

كلماتي التهمة في الحكم

القلم أداة الإجرام

الحبر دماء الاحساس جعلوه الباصم الشاهد

من أجل النطق بتهمتنا…

اسمع يا قدري يا عمري

ما قال الحاكم والقاضي

فقصيدتي صارت متهمة

وقصيدتي صارت إجرامٌ

في بلد الحكم – الحرية –

السجن مصير الفنان...!


(سجن الجلمة، ٢/١١/٢٠١٥ م)



No comments:

Post a Comment