Wednesday 5 December 2018

ইমাম মুসলিমঃ সৌহার্দ্য ও শিষ্টাচার

 

রাসূলের (সাঃ) বাণী—

সৌহার্দ্য ও শিষ্টাচার

الأحاديث المنتخبة من صحيح مسلم

সাহিহ মুসলিম হতে সংকলিত হাদিসসমূহ

كتاب البر والصلة والآداب

অধ্যায়- পুণ্য, সম্পর্ক-স্থাপন ও শিষ্টাচার

 

باب بِرِّ الْوَالِدَيْنِ وَإنَّهُمَا أَحَقُّ بِهِ

অনুচ্ছেদঃ পিতামাতার সঙ্গে সদাচরণ এবং তাঁরা এই সদাচরণের অগ্রাধিকারী

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ أَحَقُّ الناس بِحُسْنِ الصُّحْبَةِ قَالَ ‏"‏أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أُمُّكَ ثُمَّ أَبُوكَ ثُمَّ أَدْنَاكَ أَدْنَاكَ ‏"‏.‏

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীততিনি বলেছেন- এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, “হে আল্লাহ্‌র রাসুল! লোকেদের মধ্যে উত্তম সাহচর্যের সর্বাপেক্ষা অধিকারী কে?” রাসুল (সাঃ) উত্তর করলেন-  “তোমার মা। তারপরে তোমার মা। তারপরেও তোমার মা। তারপরে তোমার বাবা। তারপরে তোমার অন্যান্য নিকটবর্তীরা

عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي حَبِيبٍ، أَنَّ نَاعِمًا، مَوْلَى أُمِّ سَلَمَةَ، حَدَّثَهُ أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ قَالَ: أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم، فَقَالَ:"‏أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ"‏.‏ قَالَ: ‏"‏فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَىٌّ‏"‏.‏ قَالَ "‏نَعَمْ، بَلْ كِلاَهُمَا"‏.‏ قَالَ: ‏"‏فَتَبْتَغِي الأَجْرَ مِنَ اللَّهِ‏"‏‏.‏ قَالَ:"‏نَعَمْ"‏.‏ قَالَ: ‏"‏فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا"‏.‏

ইয়াযিদ বিন আবু হাবিব থেকে বর্ণীত। উম্মে সাল্‌মা (রাঃ)-এর দাস নায়েম তাঁর কাছে আলোচনা করেছে যে, আব্দুল্লাহ বিন আম্‌র বিন আল্‌-আস (রাঃ) বলেছেন নবি (সাঃ)-র কাছে এক ব্যক্তি আসল। এসে বলল“আমি আল্লাহ্‌র থেকে ভালো বিনিময় চাই; তাই আপনার নিকট হিজ্‌রত (দেশত্যাগ) জিহাদের (সংগ্রামের) শপথ নিচ্ছি”রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন“তোমার মা-বাবা কেউ কি জীবিত আছেন?” লোকটি বলল“হ্যাঁ, বরং উভয়ে (বেঁচে আছেন)”রাসুল (সা) বললেন“আর তুমি আল্লাহ্‌র কাছে ভালো বিনিময় কামনা করছ?” লোকটি বলল“হ্যাঁ”রাসুল (সাঃ) (তাঁকে) আদেশ করলেন“তুমি তোমার মা-বাবার কাছে ফিরে যাও এবং ভালোভাবে তাঁদের সেবা করো”

 

باب فَضْلِ صِلَةِ أَصْدِقَاءِ الأَبِ وَالأُمِّ وَنَحْوِهِمَا

অধ্যায়ঃ পিতামাতা ও অনুরূপদের বন্ধুবর্গের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের মাহাত্ম্য

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّهُ كَانَ إِذَا خَرَجَ إِلَى مَكَّةَ كَانَ لَهُ حِمَارٌ يَتَرَوَّحُ عَلَيْهِ إِذَا مَلَّ رُكُوبَ الرَّاحِلَةِ وَعِمَامَةٌ يَشُدُّ بِهَا رَأْسَهُ فَبَيْنَما هُوَ يَوْمًا عَلَى ذَلِكَ الْحِمَارِ إِذْ مَرَّ بِهِ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ أَلَسْتَ ابْنَ فُلاَنِ بْنِ فُلاَنٍ؟ قَالَ بَلَى.‏ فَأَعْطَاهُ الْحِمَارَ وَقَالَ ارْكَبْ هَذَا وَالْعِمَامَةَ - قَالَ- اشْدُدْ بِهَا رَأْسَكَ.‏ فَقَالَ لَهُ بَعْضُ أَصْحَابِهِ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ أَعْطَيْتَ هَذَا الأَعْرَابِيَّ حِمَارًا كُنْتَ تَرَوَّحُ عَلَيْهِ وَعِمَامَةً كُنْتَ تَشُدُّ بِهَا رَأْسَكَ ‏.‏ فَقَالَ إِنِّي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏"‏إِنَّ مِنْ أَبَرِّ الْبِرِّ صِلَةَ الرَّجُلِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيهِ بَعْدَ أَنْ يُوَلِّيَ"‏.‏ وَإِنَّ أَبَاهُ كَانَ صَدِيقًا لِعُمَرَ.‏

ইবনে উমার (রা) হতে বর্ণীত। তিনি যখন মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছিলেন, তখন তাঁর কাছে একটি গাধা ছিল। তার পীঠে তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য আরোহণ করতেন, যখন উষ্ট্রির পীঠে চেপে বিরক্ত হয়ে যেতেন। আরও ছিল একটি পাগড়ী, যেটি তিনি মাথায় বাঁধতেন। এমত অবস্থায় তিনি একদিন ঐ গাধার পীঠে (স্বাচ্ছন্দ্য বোধের জন্য) আরোহণ করেছিলেন, এমন সময় হঠাৎ এক দেহাতী ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি (তাকে) জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি কি অমুক ব্যক্তির ছেলের ছেলে নও?”দেহাতী লোকটি উত্তর করল, হ্যাঁ, অবশ্যই। ইব্‌নে উমার (রা) তাকে নিজের গাধাটি দিয়ে বললেন, “এর উপর আরোহণ করো”তারপর পাগড়ীটি ধরিয়ে বললেন, “এটা তোমার মাথায় বেঁধে নাও”(এই কর্মকাণ্ড দেখে) ইবনে উমার (রা)-এর সহযাত্রীদের একজন বলে উঠল, আল্লাহ্‌ আপনাকে ক্ষমা করুক! আপনি এই দেহাতীকে (নিজের) গাধাটি দিয়ে দিলেন, যার পীঠে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে আরোহণ করে যাত্রা করতেন; এবং পাগড়ীটিও, যেটি নিজের মাথায় বাঁধতেন। তখন তিনি (ইব্‌নে উমার রা) বললেন, আমি শুনেছি, রাসুল (সা) বলছিলেন, “নিশ্চয় সর্বাধিক পুণ্যময় কাজ হল কোনো ব্যক্তির নিজ পিতার বন্ধুর পরিবারের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করা, পিতার মৃত্যুর পরে”এবং সেই দেহাতীর পিতা উমার (রা)-এর বন্ধু ছিলেন। 

 

باب تَفْسِيرِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ

অধ্যায়ঃ পুণ্য ও পাপের ব্যখ্যা

عَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ الأَنْصَارِيِّ، قَالَ سَأَلْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الْبِرِّ وَالإِثْمِ فَقَالَ "‏الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالإِثْمُ مَا حَاكَ فِي صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ‏"‏‏.‏

নাওয়াস বিন সাম্‌‘আন (রাঃ) হতে বর্ণীততিনি বলেন— আমি রাসুল (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম পাপ এবং পুণ্য সম্পর্কে। তিনি (উত্তরে) বললেন, পুণ্য হল উত্তম আচরণ। আর পাপা হল যা কিছু তোমার মনে সংশয় সৃষ্টি করে এবং তুমি অপছন্দ করো লোকেরা সে-বিষয়ে জেনে ফেলুক। 

 

باب صِلَةِ الرَّحِمِ وَتَحْرِيمِ قَطِيعَتِهَا

‏‏অধ্যায়টি সম্পর্ক স্থাপন ও সম্পর্ক ছিন্ন করার নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏إنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ فَقَالَتْ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ مِنَ الْقَطِيعَةِ.‏ قَالَ نَعَمْ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟ قَالَتْ بَلَى.‏ قَالَ "فَذَاكَ لَكِ"‏.‏ ثُمَّ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ‏{‏ فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ * أُولَئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَى أَبْصَارَهُمْ * أَفَلاَ يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَى قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا‏}"‏.‏

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন— মহান আল্লাহ্‌ সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করলেন। তিনি যখন সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করলেন, আত্মীয়তার বন্ধন দাঁড়িয়ে বলল, এই জায়গাটি তাঁদের জন্য যারা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা থেকে আশ্রয় কামনা করে। আল্লাহ্‌ বললেন, হ্যাঁ অবশ্যই। আচ্ছা তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে আমি তার সাথে সম্পর্ক রাখবো যে তোমার সাথে সম্পর্ক রাখবে এবং তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবো যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে? আত্মীয়তার বন্ধন উত্তর দিল, অবশ্যই। আল্লাহ্‌ বললেন, তোমাকে তা (এই মর্যাদা ও অধিকার) দেওয়া হল। অতঃপর রাসুল (সাঃ) বললেন, তোমরা চাইলে (এই মর্মে এই আয়াতটি) পড়তে পারো, “সম্ভাবনা রয়েছে তোমরা, যদি তোমরা ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ করো তাহলে পৃথিবীর বুকে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধনকে ছিন্ন করবে। এমন লোকেদেরকেই আল্লাহ্‌ অভিশাপ দিয়েছেন এবং তাদের শ্রবণ ও দৃষ্টি শক্তি ছিনিয়ে নিয়েছেন। তারা কি আল্‌-কুর্‌আনের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তাভাবনা করে না, নাকি তাদের হৃদয় ও চিন্তাশক্তিতে তালা লেগে গেছে?”   

 

باب تحريم التَّحَاسُدِ وَالتَّبَاغُضِ وَالتَّدَابُرِ ‏‏

অধ্যায়ঃ পরস্পরের প্রতি হিংসা, বিদ্বেষ ও পশ্চাদ্ধাবনের নিষিদ্ধতা

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ "‏لاَ تَبَاغَضُوا وَلاَ تَحَاسَدُوا وَلاَ تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللَّهِ إِخْوَانًا وَلاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثٍ"‏‏.‏       

আনাস বিন মালিক হতে বর্ণীত, যে রাসুল সা বলেছেন- তোমরা হিংসা-বিদ্বেষ এবং একেঅপরের পশ্চাদ্ধাবন করো না। আল্লাহ্‌র দাসেরা পরস্পরের ভাই হয়ে যাও কেননা, কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয় যে সে অপর ভাইয়ের সঙ্গে তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখবে

 

باب تَحْرِيمِ الْهَجْرِ فَوْقَ ثَلاَثٍ بِلاَ عُذْرٍ شَرْعِيٍّ ‏‏

অধ্যায়ঃ কোনো শরিয়ৎ সম্মত কারণ ছাড়াই তিন দিনের অধিক সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখা নিষিদ্ধ

عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ‏"‏لاَ يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ أَنْ يَهْجُرَ أَخَاهُ فَوْقَ ثَلاَثِ لَيَالٍ يَلْتَقِيَانِ فَيُعْرِضُ هَذَا وَيُعْرِضُ هَذَا وَخَيْرُهُمَا الَّذِي يَبْدَأُ بِالسَّلاَمِ‏"‏.‏

আবু আইয়ুব আন্‌সারী (রাঃ) থেকে বর্ণীত। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে সে তার ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে রাখবে তিন রাতের অধিক। এমনভাবে যে তাদের উভয়ের দেখা হলে একজন এদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় তো দ্বিতীয় জন ওদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। তাদের দু’জনের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হল সেই ব্যক্তি যে সালাম দিয়ে আলাপ শুরু করে।

 

باب فَضْلِ عِيَادَةِ الْمَرِيضِ ‏‏

অধ্যায়ঃ রোগীর শুশ্রূষার গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য

عَنْ ثَوْبَانَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "‏عَائِدُ الْمَرِيضِ فِي مَخْرَفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ"‏.‏

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনযে ব্যক্তি রোগীর সেবা-শুশ্রূষা করে, যতক্ষণ না সে রোগীর কাছ থেকে ফিরে আসে ততক্ষণ পর্যন্ত স্বর্গোদ্যানে অবস্থান করে   

 

باب تَحْرِيمِ الظُّلْمِ ‏‏

অধ্যায়ঃ অত্যাচারের নিষিদ্ধকরণ 

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا رَوَى عَنِ اللَّهِ، تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ "‏يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا. يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ ضَالٌّ إِلاَّ مَنْ هَدَيْتُهُ فَاسْتَهْدُونِي أَهْدِكُمْ. يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ جَائِعٌ إِلاَّ مَنْ أَطْعَمْتُهُ فَاسْتَطْعِمُونِي أُطْعِمْكُمْ. يَا عِبَادِي كُلُّكُمْ عَارٍ إِلاَّ مَنْ كَسَوْتُهُ فَاسْتَكْسُونِي أَكْسُكُمْ. يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ تُخْطِئُونَ بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَأَنَا أَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا فَاسْتَغْفِرُونِي أَغْفِرْ لَكُمْ. يَا عِبَادِي إِنَّكُمْ لَنْ تَبْلُغُوا ضَرِّي فَتَضُرُّونِي وَلَنْ تَبْلُغُوا نَفْعِي فَتَنْفَعُونِي. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَتْقَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مِنْكُمْ مَا زَادَ ذَلِكَ فِي مُلْكِي شَيْئًا. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ كَانُوا عَلَى أَفْجَرِ قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِنْ مُلْكِي شَيْئًا. يَا عِبَادِي لَوْ أَنَّ أَوَّلَكُمْ وَآخِرَكُمْ وَإِنْسَكُمْ وَجِنَّكُمْ قَامُوا فِي صَعِيدٍ وَاحِدٍ فَسَأَلُونِي فَأَعْطَيْتُ كُلَّ إِنْسَانٍ مَسْأَلَتَهُ مَا نَقَصَ ذَلِكَ مِمَّا عِنْدِي إِلاَّ كَمَا يَنْقُصُ الْمِخْيَطُ إِذَا أُدْخِلَ الْبَحْرَ. يَا عِبَادِي إِنَّمَا هِيَ أَعْمَالُكُمْ أُحْصِيهَا لَكُمْ ثُمَّ أُوَفِّيكُمْ إِيَّاهَا فَمَنْ وَجَدَ خَيْرًا فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ وَمَنْ وَجَدَ غَيْرَ ذَلِكَ فَلاَ يَلُومَنَّ إِلاَّ نَفْسَهُ‏"‏.‏

আবু যার (রা) থেকে বর্ণীত। নবী (সা) বর্ণনা করেছেন বরকতময় ও সুমহান আল্লাহ্‌ হতে। আল্লাহ্‌ বলেছেন— “হে আমার দাসেরা! আমি নিজের প্রতি অত্যাচারকে নিষিদ্ধ করেছি এবং তোমাদের মাঝেও তাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের প্রতি অত্যাচার করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলেই বিপথগামী ছিলে। শুধু তারা (বিপথগামী) নয়, যাদেরকে আমি সুপথে চালিত করেছি। অতএব আমার কাছে তোমরা সুপথ প্রাপ্তির জন্য প্রার্থনা করো। হে আমার বান্দারা! তোমরা প্রত্যেকেই ক্ষুধার্ত ছিলে। তবে যাকে আমি অন্ন দিয়েছিলাম সে নয়। সুতরাং আমার কাছে অন্ন যাঞ্চা করো। হে আমার বান্দারা! তোমরা সকলে বস্ত্রহীন ছিলে। শুধু তারা নয় যাদেরকে আমি আবৃত করেছিলাম। অতএব আমার কাছে তোমরা আবরণ প্রার্থনা করো। হে আমার বান্দারা! নিঃসন্দেহে তোমরা দিবারাত্রি অনেক ভুলভ্রান্তি করে থাকো। আর আমি তোমাদের সকল ত্রুটি মার্জনা করি। অতএব আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। হে আমার বান্দারা! তোমরা কখনই আমার কোনোরকম ক্ষতি করতে পারবে না, আর না কখনো কোনোভাবে আমার কোনো উপকার করতে সক্ষম হবে, যে আমার কোনো ক্ষতি বা উপকার করবে। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ববর্তী, পরবর্তী, মানুষ ও জীন সকলে যদি তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে আল্লাহ্‌ভীরু ও সংযমশীল ব্যক্তির মতো হয়ে যায় তাতে আমার বিন্দু মাত্র ক্ষমতা বেড়ে যাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ববর্তী, পরবর্তী, মানুষ ও জীন সকলে যদি তোমাদের মধ্যকার সবচেয়ে পাপিষ্ঠ ও জঘন্য ব্যক্তির মতো হয়ে যায় তাতে আমার বিন্দু মাত্র ক্ষমতা কমে যাবে না। হে আমার বান্দারা! তোমাদের পূর্ববর্তী, পরবর্তী, মানুষ ও জীন সকলে যদি কোনো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করে এবং আমি প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার কাঙ্ক্ষিত বস্তু দিয়ে দিই তাহলে আমার ভাণ্ডারে যা কিছু আছে তাতে একটুও কমবে না; তবে ততটুকু যতটুকু একটা সূচ সমুদ্রে ডোবালে সমুদ্রের জল কমে যায়। হে আমার বান্দারা! এসব তোমাদের কৃতকর্ম, আমি এগুলোকে তোমাদের জন্য হিসেব করে রাখি। অতঃপর আমি তোমাদেরকে এগুলোর বিনিময় প্রদান করবো। অতএব যে ব্যক্তি (বিনিময় রূপে) ভালো কিছু লাভ করবে সে যেন আল্লাহ্‌র প্রশংসা করে। আর যে ব্যক্তি (বিনিময় রূপে) মন্দ কিছু পাবে সে যেন তার জন্য নিজেকে দোষারোপ করে, অন্য কাউকে নয়।

    

باب تَرَاحُمِ الْمُؤْمِنِينَ وَتَعَاطُفِهِمْ وَتَعَاضُدِهِمْ ‏‏

অধ্যায়ঃ মোমিনদের পরস্পরের প্রতি করুণা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা

عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم "‏الْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا‏"‏‏.‏

আবু মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেনএকজন মোমিন আর একজন মোমিনের জন্য নির্মিত ভবনের মতো। তার এক অংশ অপর অংশকে শক্তি যোগায়।

 

باب النَّهْىِ عَنِ السِّبَابِ ‏‏

অধ্যায়ঃ গালমন্দ করার নিষেধ 

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏"‏الْمُسْتَبَّانِ مَا قَالاَ فَعَلَى الْبَادِئِ مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُومُ"‏.‏

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণীত। রাসুল (সা) বলেছেন—দু’জন গালমন্দকারী ব্যক্তি যা কিছু বলে সবই বর্তায় সূচনাকারী ব্যক্তির উপর যতক্ষণ না পীড়িত জন (অর্থাৎ দ্বিতীয় ব্যক্তিটি) বাড়াবাড়ি করে এবং সীমালঙ্ঘন করে।

 

باب اسْتِحْبَابِ الْعَفْوِ وَالتَّوَاضُعِ ‏‏

অধ্যায়টি ক্ষমা ও বিনয়ের পছন্দনীয় হওয়া প্রসঙ্গে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ "‏مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللَّهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلَّهِ إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ"‏.‏

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণীত। রাসুল (সা) বলেছেন— সাদ্‌কা সম্পদকে কম করে না। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমার কারণে বান্দার সম্মান বাড়িয়ে দেন। এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র জন্য বিনয়ী হয় আল্লাহ্‌ তাঁকে সমুন্নত মর্যাদার অধিকারী করেন।  

 

باب ذَمِّ ذِي الْوَجْهَيْنِ وَتَحْرِيمِ فِعْلِهِ ‏‏

অধ্যায়টি দ্বিচারি ব্যক্তির নিন্দা ও তার কাজের নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ: "إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلاَءِ بِوَجْهٍ"‏.‏

আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণীত রাসুল (সা) বলেছেন নিশ্চয়ই লোকেদের মধ্যে সব চেয়ে নিকৃষ্ট হল কপট ব্যক্তি, যে এদের কাছে আসে একটা রূপ নিয়ে আর ওদের কাছে আরকটা রূপ নিয়ে যায়

 

باب تَحْرِيمِ النَّمِيمَةِ ‏‏

চুগলখোরির নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে অধ্যায়টি

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ إِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ: ‏"‏أَلاَ أُنَبِّئُكُمْ مَا الْعَضْهُ، هِيَ النَّمِيمَةُ الْقَالَةُ بَيْنَ النَّاسِ"‏.‏ وَإِنَّ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم قَالَ: "إِنَّ الرَّجُلَ يَصْدُقُ حَتَّى يُكْتَبَ صِدِّيقًا وَيَكْذِبُ حَتَّى يُكْتَبَ كَذَّابًا"‏.‏

আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা হতে বর্ণীত, তিনি বলেন, মোহাম্মদ সা বলেছেন- আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, ‘আযহ’ (কু-কথা) কী, তা হল চুগলি ও নিন্দা, যা লোকেদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে (বিভেদ সৃষ্টি করে) মোহাম্মদ সা আরও বলেছেন- এক ব্যক্তি (সর্বদা) সত্য বলে, এমনকি তাঁকে সত্যবাদী গণ্য করা হয়; আর একজন মিথ্যা বলে, এমনকি তাঁকে মিথ্যুক গণ্য করা হয়

 

باب قُبْحِ الْكَذِبِ وَحُسْنِ الصِّدْقِ وَفَضْلِهِ

অধ্যায়টি মিথ্যার কদর্যতা ও সত্যের সৌন্দর্য ও মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে  ‏‏

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم: "‏عَلَيْكُمْ بِالصِّدْقِ فَإِنَّ الصِّدْقَ يَهْدِي إِلَى الْبِرِّ وَإِنَّ الْبِرَّ يَهْدِي إِلَى الْجَنَّةِ. وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَصْدُقُ وَيَتَحَرَّى الصِّدْقَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ صِدِّيقًا. وَإِيَّاكُمْ وَالْكَذِبَ فَإِنَّ الْكَذِبَ يَهْدِي إِلَى الْفُجُورِ وَإِنَّ الْفُجُورَ يَهْدِي إِلَى النَّارِ وَمَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَكْذِبُ وَيَتَحَرَّى الْكَذِبَ حَتَّى يُكْتَبَ عِنْدَ اللَّهِ كَذَّابًا ‏"‏ ‏.‏

আব্দুল্লাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, রাসুল (সা) বলেছেন— “তোমরা সত্যকে আঁকড়ে ধরো। কারণ সত্য পুণ্যের পথ দেখায় আর পুণ্য স্বর্গের দিশা দেয়। এক ব্যক্তি সর্বদা সত্যি কথা বলেসত্যের অনুসন্ধান করে। এমনকি তাকে আল্লাহ্‌র নিকট সত্যবাদী বলে গণ্য করা হয়। আর তোমরা মিথ্যাকে পরিহার করো। 

 

باب فَضْلِ إِزَالَةِ الأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ

অধ্যায়টি পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়ার মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে  

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ:‏ "‏إِنَّ شَجَرَةً كَانَتْ تُؤْذِي الْمُسْلِمِينَ فَجَاءَ رَجُلٌ فَقَطَعَهَا فَدَخَلَ الْجَنَّةَ"‏.‏

আবু হুরায়রাহ্‌ (রা) থেকে বর্ণীত। রাসুল (সা) বলেছেন— “ একটি গাছ (পথের মাঝখানে) মুসলিমদের (যাতায়াতের পথে) কষ্ট দিত। এক ব্যক্তি উদ্যোগ নিয়ে সেই গাছটিকে কেটে ফেলল। ফলস্বরূপ সে জান্নাতে প্রবেশ করল।

 

باب تَحْرِيمِ تَعْذِيبِ الْهِرَّةِ وَنَحْوِهَا مِنَ الْحَيَوَانِ الَّذِي لاَ يُؤْذِي

অধ্যায়টি বিড়াল ও তার মতো যে প্রাণীরা কষ্ট দেয় না তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার নিষিদ্ধতা প্রসঙ্গে

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ:‏ "‏عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ هِيَ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ‏"‏‏.‏

আব্দুল্লাহ্‌ থেকে বর্ণীত। রাসুল (সা) বলেছেন— “(একবার) এক মহিলাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল একটি বিড়ালের কারণে। মহিলাটি বিড়ালটিকে বন্দী করে রেখেছিল। এ পর্যন্ত যে বিড়ালটি মারা যায়। আর মহিলাটি সেকারণেই নরকে নিক্ষিপ্ত হয়। কারণ, মহিলাটি যখন তাকে বন্দী করে রেখেছিল, তাকে খেতে দেয়নি, কোনো কিছু পানও করায়নি। আর না তাকে মুক্ত করেছিল যে, সে পৃথিবীর কীটপতঙ্গ ধরে খাবে”। 

 

باب الْوَصِيَّةِ بِالْجَارِ وَالإِحْسَانِ إِلَيْهِ

  অধ্যায়টি প্রতিবেশীর সম্পর্কে অসিয়ত করা এবং তার সাথে সদাচরণ প্রসঙ্গে

عَنْ عُمَرَ بْنِ مُحَمَّدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ ‏"‏ ‏.‏

উমার বিন মুহাম্মদ থেকে বর্ণীত। তিনি নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (মুহাম্মদ) বলেছেন, আমি শুনেছি, ইব্‌নু উমার (রা) বলছিলেন, রাসুল (সা) বলেছেন— “বরাবর জিবরীল (আ) আমাকে প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসিয়ত করতেন। এমনকি আমার মনে হয়েছে, তিনি প্রতিবেশীকে (সম্পদে) উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করে দেবেন”

 

باب اسْتِحْبَابِ طَلاَقَةِ الْوَجْهِ عِنْدَ اللِّقَاءِ

অধ্যায়টি সহাস্য বদনে সাক্ষাৎ করার পছন্দনীয় হওয়া প্রসঙ্গে

عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ لِيَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏لاَ تَحْقِرَنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ شَيْئًا وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ‏"‏‏.‏

আবু যার (রা) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, আমাকে নবী (সা) বলেছেন— “যেকোনো রকমের ভালো কাজ বা বিষয়কে অবজ্ঞা করো না; যদি তা এও হয় যে, তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে”

 

باب اسْتِحْبَابِ الشَّفَاعَةِ فِيمَا لَيْسَ بِحَرَامٍ

অধ্যায়টি হারাম নয় এমন বিষয়ে সুপারিশ করার পছন্দনীয় হওয়া প্রসঙ্গে 

عَنْ أَبِي مُوسَى، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا أَتَاهُ طَالِبُ حَاجَةٍ أَقْبَلَ عَلَى جُلَسَائِهِ فَقَالَ ‏ "‏اشْفَعُوا فَلْتُؤْجَرُوا وَلْيَقْضِ اللَّهُ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّهِ مَا أَحَبَّ ‏"‏ ‏.‏

আবু মুসা (রা) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, রাসুল (সা)-এর কাছে যখন কোনো অভাবী ব্যক্তি প্রয়োজন পূরণের জন্য আসত, তিনি সভাসদদের দিকে তাকাতেন এবং বলতেন— “তোমরা সুপারিশ করো। যাতে তোমরা ভালো বিনময় লাভ করতে পারো। এবং যাতে আল্লাহ্‌ যা কিছু পছন্দ করেন নবী (সা)-এর মাধ্যমে তা পূর্ণ বা সম্পাদন করেন”

 

باب الاستئذان

অধ্যায়ঃ অনুমতি চাওয়া

عن بسر بن سعيد. قال: سمعت أبا سعيد الخدري يقول: كنت جالسا بالمدينة في مجلس الأنصار. فأتانا أبو موسى فزعا أو مذعورا. قلنا: ما شأنك؟ قال: إن عمر أرسل إلي أن آتيه. فأتيت بابه فسلمت ثلاثا فلم يرد علي. فرجعت فقال: ما منعك أن تأتينا؟ فقلت: إني أتيت. فسلمت على بابك ثلاثا. فلم يردوا علي. فرجعت. وقد قال رسول الله صلى الله عليه وسلم (إذا استأذن أحدكم ثلاثا فلم يؤذن له، فليرجع). فقال عمر: أقم عليه البينة وإلا أوجعتك. فقال أبي بن كعب: لا يقوم معه إلا أصغر القوم. قال أبو سعيد: قلت: أنا أصغر القوم. قال: فاذهب به.


বুস্‌র বিন্‌ সা'য়িদ হতে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, আমি শুনেছি আবু সায়ীদ আল্‌-খুদ্‌রী (রাঃ) বলছিলেন, আমি মদিনায় আন্‌সারদের এক বৈঠকে বসে ছিলাম। এমন সময় আবু মুসা (রাঃ) আমাদের কাছে অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় হাজির হলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে আপনার? বললেন, উমার (রাঃ) আমার কাছে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, আমি যেন তাঁর সাথে দেখা করি। আমি গেলাম। তাঁর দরজায় দাঁড়িয়ে তিন বার সালাম দিলাম। কিন্তু কেউ কোনো উত্তর দিলো না। বাধ্য হয়ে আমি ফিরে এলাম। (পরে যখন তাঁর সাথে আমার দেখা হল) তিনি (আমাকে) বললেন, আমার কাছে আস্তে কে তোমাকে বাধা দিয়েছিল (বা তুমি কেন আসনি)? আমি বললাম, আমি অবশ্যই গেছিলাম। তিন বার আপনার দরজায় সালামও দিয়েছিলাম। কিন্তু কেউ কোনো উত্তর দেয়নি। তাই বাধ্য হয়ে ফিরে এসেছি। কেননা নবীজি (সাঃ) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তিন বার অনুমতি চাইবে, অতঃপর তাকে যদি অনুমতি না দেওয়া হয়, তার উচিৎ সেখান থেকে ফিরে আসা। (এ কথা শুনে) উমার বললেন, (নবীজি সাঃ এমন আদেশ দিয়েছেন) এর প্রমাণ নিয়ে আসো, তা নাহলে আমি তোমার পীঠের চামড়া তুলে নেবো। উবাই বিন্‌ কা'’(রাঃ) বললেন, আবু মুসার সাথে এখানে যে সবচেয়ে বয়সে ছোট সেই যাবে। আবু সায়ীদ বর্ণনা করছেন, আমি (তাঁদেরকে) বললাম, এখানে সবচেয়ে ছোট আমি। উবাই বিন্‌ কাআব বললেন, তাহলে তার (অর্থাৎ আবু মুসার) সাথে তুমি যাও।   

 


باب كراهة قول المستأذن أنا، إذا قيل من هذا

অধ্যায়ঃ যখন জিজ্ঞেস কড়া হবে, “কে আপনি?” তার উত্তরে অনুমতি প্রার্থনাকারীরআমিবলা অপছন্দনীয়

عن جابر بن عبدالله قال: أتيت النبي صلى الله عليه وسلم. فدعوت. فقال النبي صلى الله عليه وسلم: من هذا؟ قلت: أنا. قال: فخرج وهو يقول: أنا أنا.

 

জাবির বিন্‌ আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণীত। তিনি বলেছেন, আমি নবী (সাঃ)-এর কাছে আসলাম। নবীজিকে আওয়াজ দিলাম। নবীজি জিজ্ঞেস করলেন, কে? আমি বললাম, আমি। জাবির বলেছেন, (এ কথা শুনে) নবীজি বেরিয়ে এলেন আর তিনি (রাগে গজগজ করতে করতে) বলছিলেন, আমি, আম।

 

باب تحريم النظر في بيت غيره

অধ্যায়ঃ অন্যের বাড়িতে দৃষ্টি নিক্ষেপ কড়া হারাম 

 عن ابن شهاب؛ أن سهل بن سعد الساعدي أخبره؛ أن رجلا اطلع في جحر في باب رسول الله صلى الله عليه وسلم. ومع رسول الله صلى الله عليه وسلم مدرى يحك به رأسه. فلما رآه رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: لو أعلم أنك تنتظرني لطعنت به في عينك. وقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: إنما جعل الإذن من أجل البصر.

 

ইব্‌নু শিহাব থেকে বর্ণীত। সাহাল বিন্‌ সাআদ আস্‌-সায়েদী তাকে খবর দিয়েছেন যে, এক ব্যক্তি (একদিন) দরজার ফুটো দিয়ে নবীজির ঘরে উঁকি মারল। নবীজির হাতে তখন একটা কাঠি ছিল। সেটা দিয়ে তিনি মাথা চুলকাচ্ছিলেন। নবীজি যখন তাকে দেখতে পেলেন, বললেনযদি আমি জানতাম যে তুমি আমাকে (ফুটো দিয়ে ওভাবে) দেখছো তাহলে এই কাঠি দিয়ে আমি তোমার চোখে গুঁতো মারতাম। তারপর নবীজি বললেন, নিঃসন্দেহে অনুমতি নেওয়ার এই বিধান দেওয়া হয়েছে (অযাচিত) দৃষ্টির কারণে।       

 

باب تسليم الراكب على الماشي والقليل على الكثير

অধ্যায়ঃ আরোহী পদাতিককে এবং কম সংখ্যকেরা অধিক সংখ্যকদের সালাম দেবে 

عَنِ ابْنِ جُرَيْج، أخبرني زياد أَنَّ ثَابِتًا مَوْلَى عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ زَيْدٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يُسَلِّمُ الرَّاكِبُ عَلَى الْمَاشِي، وَالْمَاشِي عَلَى الْقَاعِدِ، وَالْقَلِيلُ عَلَى الْكَثِيرِ. 

 

ইব্‌নু জুরাইজ থেকে বর্ণীত, (তিনি বলেছেন) আমাকে জিয়াদ খবর দিয়েছেন যে সাবিত, আব্দুর রাহ্‌মান বিন্‌ জায়েদের মুক্তো দাস তাকে খবর দিয়েছেন। তিনি শুনেছেন আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর থেকে, আবু হুরায়রা (রা) বলছিলেন, নবী (সাঃ) বলেছেনসালাম দেবে আরোহী পদাতিককে, পদাতিক উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কম সংখ্যকেরা অধিক সংখ্যকদের।  

 

باب من حق الجلوس على الطريق رد السلام

অধ্যায়ঃ পথে বসার একটা হক হল সালামের উত্তর দেওয়া

قال أبو طلحة: كنا قعودا بالأفنية نتحدث. فجاء رسول الله صلى الله عليه وسلم فقام علينا. فقال “ما لكم ولمجالس الصعدات؟ اجتنبوا مجالس الصعدات” فقلنا: إنما قعدنا لغير ما باس. قعدنا نتذاكر ونتحدث. قال “إما لا. فأدوا حقها: غض البصر، ورد السلام، وحسن الكلام.

 

আবু তাল্‌হা বলেছেন, আমরা একটা খোলা মাঠে (রাস্তার ধারে) বসে গল্পগুজব করছিলাম এমন সময় নবীজি সেখানে আসলেন। এসে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন। তারপর (আমাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার, তোমরা এভাবে রাস্তায় বসে আছো? এভাবে রাস্তায় বসা থেকে দূরে থাকো। আমরা বললাম, এমনিই কোনো কারণ ছাড়াই আমরা এখানে বসে আছি। এখানে বসে আমরা আলাপআলোচনা ও গল্পগুজব করছি। নবীজি বললেন, যদি (রাস্তায় বসা ছাড়া) অন্য কোনো উপায় না থাকে (একান্ত ভাবে রাস্তায় বসতেই হয়) তাহলে রাস্তার হক আদায় করো। আর তা হল— () দৃষ্টি নীচু রাখা, () সালামের উত্তর দেওয়া এবং () ভালো ভাবে কথা বলা।   

 

بَابُ مِنْ حَقِّ الْمُسْلِمِ لِلْمُسْلِمِ رَدُّ السَّلَامِ

অধ্যায়ঃ এক মুসলিমের প্রতি আরেক মুসলিমের একটা হক হল সালামের উত্তর দেওয়া

 عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: حَقُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ سِتٌّ قِيلَ: مَا هُنَّ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: إِذَا لَقِيتَهُ فَسَلِّمْ عَلَيْهِ، وَإِذَا دَعَاكَ فَأَجِبْهُ، وَإِذَا اسْتَنْصَحَكَ فَانْصَحْ لَهُ، وَإِذَا عَطَسَ فَحَمِدَ اللَّهَ فَشمِّتْهُ، وَإِذَا مَرِضَ فَعُدْهُ وَإِذَا مَاتَ فَاتَّبِعْهُ.

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণীত, নবী (সাঃ) বলেছেন, এক মুসলিমের অপর মুসলিমের প্রতি ছয়টি হক রয়েছে। জিজ্ঞেস করা হল, নবীজি সেগুলো কী কী? নবীজি উত্তরে বললেন, () যখন তোমার তার সাথে দেখা হবে সালাম দেবে, () যখন সে তোমাকে নেমন্তন্ন করবে তুমি তার নেমন্তন্ন গ্রহণ করবে, () যখন সে তোমার কাছে পরামর্শ চাইবে তুমি তাকে সঠিক পরামর্শ দেবে, () যখন সে হাঁচি দিয়ে আল্‌-হাম্‌দু লিল্লাহ” (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য) বলবে তুমি তার উত্তরে ইয়ার্‌হামুকাল্লাহ” (আল্লাহ্‌ তোমার প্রতি করুণা করুন) বলবে, () যখন সে অসুস্থ হয়ে পড়বে তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করবে এবং () যখন সে মারা যাবে তুমি তার জানাজায় শামিল হবে।


ভাবানুবাদ - আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment