Monday 17 December 2018

জিবরান খালিল জিবরানঃ অপরাধী


অপরাধী
মূল- জিবরান খালিল জিবরান
অনুবাদ- আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

খালিল জিব্‌রান-এর এই ছোটগল্পটির অনুবাদ অনেকে করেছেন। এবং খুব ভালো অনুবাদ করেছেন তাঁরা। এখানে আমি আমার মতো করে, তার একটা ভাবানুবাদের প্রয়াস করেছি মাত্র।]

পথের ধারে বসে এক যুবক ভিক্ষা করছিল। বেশ সুঠামদেহী। কিন্তু ক্ষুধার কারণে কুঁকড়ে গেছিল তার শরীর। রাস্তার একপাশে বসে, পথচারীদের সম্মুখে হাত প্রসারিত করে সাহায্যের জন্য আকুতি করছিল। আর্তনাদ করছিল, নিজের অসহায়তা ও যন্ত্রণার কথা বারবার উচ্চারণ করে, সজ্জন পথিকদের নিকট...।

অন্ধকার নেমে এলো, তখনও তার ঝুলি ছিল শূন্য, তার ক্ষুধার্ত উদরের মতই। এদিকে ঠোঁট শুকিয়ে কাঠ। জিহ্বাও অসাড়। তাই, সেখান থেকে উঠে হাঁটা দিল শহরের বাইরে...। গাছের তলায় বসে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল। কিছুক্ষণ পর, অশ্রু আচ্ছাদিত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল, তখন তার উদর ক্ষুধার কারণে মোচড় দিচ্ছিল- ‘হে প্রভু, আমি ধনীদের কাছে গেছি কাজের সন্ধানে। কিন্তু আমার জীর্ণ কাপড়ের দরুন আমায় তাড়িয়ে দিয়েছে। বিদ্যালয়ের দরজায় কড়া নেড়েছি, অর্থ না থাকার কারণে আমায় ঢুকতে দেয়নি। পেটে-ভাতের বিনিময়ে দিনমজুরী করতে চেয়েছি, বিশ্রী চেহারার কারণে তাও জোটেনি...। অবশেষে লোকের সামনে হাত পেতেছি। প্রভু, তাঁরা আমায় দেখে 'এ তো সুস্থ স্বাভাবিক, এর মতো অলসদের প্রতি দয়া করা উচিৎ নয়...' বলে বিদ্রূপ করেছে। প্রভু, তোমার ইচ্ছাতেই তো মা আমায় জন্ম দিয়েছে। তোমার ইচ্ছাতেই তো আমার বেঁচে থাকা। তাহলে মানুষ কেন আমাকে সামান্য খাবার থেকে বঞ্চিত করছে; অথচ আমি তোমার নামে ভিক্ষা চাইছি। 
  
এবার তীব্র হতাশা ক্ষোভে বদলে গেল। ফলে তার চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল। উঠে দাঁড়াল সে, তার চোখ দু'টি তখন জ্যোতিষ্কের ন্যায় জ্বলজ্বল করছিল। একটা শুকনো শক্ত ডাল ভেঙে শহর পানে তুলে চিৎকার করে বলতে লাগল- কোপালের ঘাম ঝরিয়ে একটু খাবারের সন্ধান করেছিলাম, পাইনি। এবার তা বাহুবলে হাসিল করবো। ভালোবাসার নামে দু'মুঠো খাবার চেয়েছিলাম, কেউ শোনেনি। এবার তা ঘৃণা ও ভয় দেখিয়ে আদায় করবো এবং বেশি পরিমাণে উসুল করবো।

তারপর কেটে গেছে বহু বছর...। এখনো সে অর্থের জন্য মানুষ খুন করতে ছাড়েনি। যারাই তার পথে বাঁধা সৃষ্টি করেছে তাঁদেরকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন তার অর্থ-সম্পদ প্রচুর। প্রভাবপ্রতিপত্তিও বেশ। অন্ধকার জগতের একটি প্রসিদ্ধ নাম। আর শান্তিপ্রিয় সমাজের নিকট যমের নামান্তর। এরই মধ্যে একদিন গভর্নর তাঁকে শহরে নিজ প্রতিনিধি নিযুক্ত করলেন; এটাই তো শাসকদের প্রতিনিধি নির্বাচনের চিরপ্রচলিত প্রথা।

আর এভাবেই কঠোরতার কারণে এক অসহায় ব্যক্তি হয়ে উঠল হিংস্র, একজন শান্তিপ্রিয় মানুষ রূপ নিল হত্যাকারীর...।
[দাম্‌'আহ্‌ ওয়াব্‌তিসামাহ্‌, পৃষ্ঠা ৭৩-৭৪]




المجرم

على قارعة الطريق قعد شاب مستعطيًا. فتى قويّ الجسم أضعفه الجوع فجلس في منعطف الشارع مادًّا يده نحو العابرين متسوّلاً مستغيثًا بالمحسنين، مردّدًا آيات انكساره، شاكيًا آلام جوعه.

خيّم الليل وقد يبست شفتاه وكلّ لسانه ولم تزل يده فارغة مثل جوفه. فقام إذ ذاك وذهب إلى خارج المدينة وجلس بين الأشجار وبكى بكاءً مرًّا. ثمّ رفع نحو السماء عينين يغشاهما الدمع وقال والجوع يلقنه: يا ربّ قد ذهبت إلى الموسر أطلب عملاً، فطردت لرثاثة أثوابي، وطرقت باب المدرسة، فمنعت لفراغ يديّ. ورمت الاستخدام ولو بكفاف يومي، فأُبعدت لسوء طالعي. وأخيرًا سعيت متسوّلاً فرآني عبادك يا ربّ وقالوا هذا قويّ نشيط والإحسان لا يجوز على ابن التواني والكسل. قد ولدتني أمّي بإرادتك يا ربّ، وأنا كائن الآن بكيانك، فلماذا يمنع الناس الخبز عنّي وأنا طالب باسمك؟

في تلك الدقيقة تغيّرت شحنة الرجل اليائس، فانتصب وقد لمعت عيناه كالشهب ثمّ اقتضب من الأغصان اليابسة نبوتًا ضخمًا وأشار به نحو المدينة وصرخ قائلاً: طلبت الحياة بعرق الجبين فلم أجدها، فسوف أحصل عليها بقوّة ساعدي. وسألت الخبز باسم المحبّة فلم يسمعني الإنسان، فسأطلبه باسم الشرّ وأستزيد منه...

مرّت الأيّام والشابّ يقطع الأعناق من أجل الحصول على العقود، ويهدم هياكل الأرواح إن تصدّت لمطامعه. فنمت ثروته وعمّ بطشه وصار محبوبًا من لصوص القوم ومخيفًا لعقلائهم ثمّ انتدبه الأمير وكيلاً عنه في تلك المدينة شأن الأمراء بانتقاء ممثليهم.

كذا يبتدع الإنسان من المسكين سفّاحًا باستمساكه، ومن ابن السلام قاتلاً بقساوته.

(دمعة وابتسامة ٧٣-٧٤)

No comments:

Post a Comment