Wednesday 5 December 2018

ইলিয়া আবু মাদ়ী


ইলিয়া আবু মাদ়ী  
(১৮৮৯ – ১৯৫৭ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
জন্ম ও পরিচয়ঃ
মাহ্‌জার (প্রবাসী) কবিগোষ্ঠীর অন্যতম ছিলেন ইলিয়া আবু মাদ়ী। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বাল্যকাল কাটলেও নিজস্ব অধ্যাবসায় তাঁকে আধুনিক আরবী সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্রের অন্তর্ভূক্ত করে। তিনি বিখ্যাত আর্‌-রাবিত়াহ্‌ আল্‌-ক়ালামিয়্যাহ্‌ সংগঠনের অন্যতম ছিলেন। লেবাননের আল্‌-মাতান জেলার বিকফায়া শহরের নিকটবর্তী মুহাইদাসা নামক গ্রামে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে এই সাংবাদিক কবি জন্মগ্রহণ করেন।
 
লালন পালন ও শিক্ষাঃ
কবির শৈশব ও কৈশোর জীবন আদৌ স্বচ্ছল ছিল না। বরং গ্রামেই প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করলেও আর্থিক অনটনের কারণে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। বাল্যকালেই জীবিকার উদ্দেশ্যে ১৯০০ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় মামার কাছে যান। সেখানে কঠিন পরিশ্রম করে দিনে মামার ব্যবসায় সহযোগিতা করতেন এবং রাতে  পড়াশুনো করতেন। যার ফল স্বরূপ কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই ১৯১১ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ তাজ্‌কারুল মাদী প্রকাশিত হয়।
 
বিদেশ যাত্রা ও সাহিত্য সাধনাঃ
এরপর ১৯১১ সালে উত্তর আমেরিকায় তার সহোদর ব্যবসায়ী ভাইয়ের নিকট যাত্রা করেন। সেখানেও দিনে ব্যবসা ও রাতে সাহিত্য সাধনায় লিপ্ত থাকতেনএইরূপ সাহিত্য প্রেম দেখে তার ভাই মুরাদ কাজের ভার লাঘব করে তাঁকে সাহিত্য চর্চার আরও বেশি সুযোগ করে দেন। তাঁর সাধনার অগ্রগতিতে তাঁর ভাইয়ের এই অবদান অনস্বীকার্য। ১৯১৬ সালে নিউ ইয়র্ক যান এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। এখানে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকতা ও সম্পাদনায় যুক্ত হন। সর্বোপরি জিব্‌রান, মিখাইল প্রমুখদের সঙ্গে আর্‌-রাবিত়াহ্‌ আল্‌-ক়ালামিয়্যাহ্‌ নামক সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করেন। এখান থেকেই ১৯১৯ সালে তাঁর দীওয়ানের দ্বিতীয় খন্ড এবং ১৯২৫ সালে তৃতীয় খণ্ডটি প্রকাশিত হয়।
 
কর্মজীবন ও মৃত্যুঃ
১৯১৮ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত তিনি মির্‌আতুল্‌ গার্‌বী নামক পত্রিকার সম্পাদনা করেন। উল্লেখ্য যে এই পত্রিকার পরিচালক নাজীব দীয়াবের কন্যার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯২৯ সালে নিজেই আস্‌-সামীর নামক একটি সাপ্তাহিকী পত্রিকা প্রকাশ করেন, যেটি ১৯৩৬ সালে দৈনিকে রূপান্তরিত হয়। পরবর্তীতে এটি উত্তর আমেরিকার একটি অন্যতম প্রধান মাহ্‌জার দৈনিকে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৯ সালে তিনি বেইরুতে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর সম্মেলনে আমেরিকা প্রবাসী আরব সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। ১৯৫৭ সালের ২৩শে নভেম্বর এই স্বনামধন্য কবি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মৃত্যু বরণ করেন।
 
রচনাবলীঃ
তাঁর রচিত একাধিক দীওয়ানের প্রায় সব ক’টাই তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়েছিল। শুধু একটা দীওয়ান তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় প্রকাশিত দীওয়ানগুলি হল— (১) তাজ্‌কারুল মাদি (১৯১১), এটি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। (২) দীওয়ান আবু মাযী, ১৯১৪ সালে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। (৩) আল্‌-জাদাবিল (১৯২৭), এটি তার সর্বোত্তম কাব্যগ্রন্থ। (৪) আয্‌-যামাইল (১৯৪০), নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত। (৫) তিবরুন্‌ ওয়া তুরাব (১৯৬০), এটিই একমাত্র কাব্য সংকলন, যা তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়।
 
কাব্যবৈশিষ্টঃ
প্রথম দিকে তাঁর কবিতায় প্রাচীন ভাবধারা লক্ষ করা গেলেও পরবর্তীতে জুবরান, মিখাইল প্রমুখ আধুনিক মাহ্‌জার কবির সংস্পর্শে এসে আধুনিক ধ্যানধারণায় উজ্জিবীত হন। আব্বাসী যুগের কবিদের মধ্যে আল্‌-মা‘আর্‌রী, আবু নুওয়াস এবং রেনেসা যুগের কবিদের মধ্যে আল্‌-বারূদী ও শাওকীর ভাবধারায় বেশ প্রভাবিত ছিলেন। তাঁর ভাষা ছিল সহজ ও সাবলীল এবং প্রাঞ্জল। প্রতিটি কবিতায় ছিল এক একটি বিষয় নির্ভর। একই কবিতায় ভিন্ন ওয়ায্‌ন (ছন্দ) ও কাফিয়ার (অন্ত্যমিলের) সংমিশ্রন দেখা যায়। আরবী ব্যাকরণ ও ছন্দ শাস্ত্রে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। প্রখর কল্পনাশক্তি তাঁর সাহিত্য কর্মকে সমৃদ্ধ করেছে। ঐতিহাসিক হান্না আল্‌- ফাখুরী উদার ও মানবতাবাদী কবি রূপে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আল্‌-মাসা (সন্ধ্যা) নামক তাঁর এক কবিতায় লিখেছেন—
السحب تركض في القضاء         الرحب ركض الخائفين
والشمس تبدوخلفها          صفراء عاصبة الجبين

No comments:

Post a Comment