Wednesday 5 December 2018

রেফাআহ রাফে আত-তাহতাবী


রেফ়াহ্‌ রাফ়ে’ আত়্-ত়াহ্‌ত়াবী
(১৮০১ ১৮৭৩ খ্রি)
আব্দুল মাতিন ওয়াসিম
 
পরিচিতি ও জন্মঃ
তিনি মিশরে নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ। অধিক জ্ঞান ও বুৎপত্তির জন্য তিনি শায়খু মাশায়েখিল্‌ মা'’রিফ আল্‌-মিস্‌রিয়্যাহ্‌ (মিশরীয় জ্ঞান ও সংস্কৃতির শিক্ষককুলের শিক্ষক) নামে পরিচিত। তাঁর নাম রেফ়াহ্‌ রাফ়ে’পিতার নাম বাদাবী। তিনি সূহাজ প্রদেশের ত়াহ্‌ত়া শহরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাই তাঁকে রেফ়াহ্‌ রাফ়ে’ আত়্-ত়াহ্‌ত়াবী বলা হয়। পিতার দিক থেকে তাঁর বংশ শৃঙ্খল ইমাম হুসাইনের (রাঃ) সঙ্গে মিলিত হয়।
     
প্রতিপালন ও শিক্ষাঃ
তিনি ত়াহ্‌ত়া শহরেই প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। পরে তিনি আয্‌হার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বেশ কিছু স্বনামধন্য অধ্যাপক ও প্রভাষকদের সান্নিধ্য লাভ করেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন আশ্‌-শায়েখ হাসান আল্‌-‘আত়্ত়াতিনি সে সময় জামে‘আ য্‌হারের শায়খুল্‌ জামে’আ (উপাচার্য) ছিলেন। তাঁর বিশেষ তত্ত্বাবধায়নে আত়্-ত়াহ্‌ত়াবী অন্ধ অনুসরণের পথ হতে নতুনত্বের উদার নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে পড়েন।
 
কর্মব্যস্ততাঃ
বছর পর ১৮২২ সালে তিনি স্নাতক হন। অতঃপর দু’ বছর একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তারপর শায়েখ আল্‌-‘আত়্ত়ার-এর অনুরোধে মুহাম্মদ ‘আলী বাশা তাঁকে সৈন্য বাহিনীর ইমাম নিযুক্ত করেন। ১৮২৬ সালে মুহাম্মাদ বাশা যখন ৪০ জনকে বিভিন্ন বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ফ্রান্স প্রেরণ করেন তখন তিনি তাঁকে তাঁদের সঙ্গে ইমাম ও পথ প্রদর্শক রূপে পাঠান। আর এই সুবাদে তিনি আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর হতে ফ্রান্স যাত্রা করেন।
 
আরবী সাংবাদিকতায় তাঁর অবদানঃ
আত়্-ত়াহ্‌ত়াবী প্যারিসে মাসিক ও দৈনিক পত্রিকাগুলির মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা দেখে অভিভূত হয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি যখন ১৮৪২ সালে আল্‌-ওয়াকায়ে’উল্‌ মিস্‌রিয়্যাহ্‌–এর সম্পাদক নিযুক্ত হন, তিনি তাতে প্রকৃত সাংবাদিকতার প্রাণ সঞ্চার করেন। আর জনসাধারণের সুবিধার্থে সহজ আরবীতে তা প্রকাশ করেন। এ কারণেই তাঁকে আবুস়্ স়াহ়াফ়াহ্‌ (সাংবাদিকতার জনক) উপাধিতে ভূষিত করা হয়।  
 
কর্মজীবন ও মৃত্যুঃ
জীবনে তিনি বিভিন্ন ধরণের কাজ ও দায়িত্ব পালন করেছেনযেমন ১৮৩৫ সালে মাদ্‌রাসাতুল্‌ আল্‌সুন প্রতিষ্ঠা করেছেন। আল্‌-ওয়াকায়ে’উল্‌ মিস্‌রিয়্যাহ্‌ নামক পত্রিকাটির সম্পাদনা করেছেন। এছাড়া মাজাল্লাতু রাওদাতুল্‌ মাদারিস নামের আরও একটি পত্রিকার সম্পাদনা করেছেন। তিনি কর্ম ও চিন্তায় জাগরণ ও মানবিক মূল্যবোধের প্রতি আহ্বান, নারী সমাজকে কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতির অন্ধকার জগত হতে বের করে জীবন ও সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেনএসব কর্মকাণ্ড নিয়ে তিনি আজীবন ব্যস্ত ছিলেন। তাঁর এই কর্মমুখোর জীবনের সমাপ্তি ঘটিয়ে ২৭ই মে ১৮৭৩ সালে তাঁর মৃত্যু হয়।   
 
তাঁর সাহিত্য সেবাঃ
আরবী ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে তাঁর অবদান অসামান্য। আরবী ভাষাকে প্রাচীন পন্থা হতে বের করে তিনিই আধুনিক চিন্তা স্রোতের সঙ্গে মিলিত করেন। তিনি বেশ কিছু মূল্যবান গরন্থ রচনা করেছেন। তাঁর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল— তাখ্‌লীসুল্‌ ইব্‌রীয ফী তাল্‌খিসে বারীয, কালায়েদুল্‌ মাফাখির ফী গারীবি ‘আওয়ায়িদুল্‌ আওয়ায়িল ওয়াল্‌ আওয়াখির, মাবাহিজুল্‌ আল্‌বাব আল্‌-মিস্‌রিয়্যাহ্‌ ফী মানাহিজুল্‌ আদাব আল্‌-‘আস্‌রিয়্যাহ্‌, আল্‌-মুর্‌শিদুল্‌ আমীন ফী তার্‌বিয়্যাতিল্‌ বানাত ওয়াল্‌ বানীন ইত্যাদি।

No comments:

Post a Comment