Monday 31 December 2018

আর-রাবেতাতু আল-কালামিয়্যাহঃ একটি প্রবাসী সাহিত্য সংগঠন


আর্-রাবেত়াতু আল্‌-ক়ালামিয়্যাহ

পরিচয়
এটি ছিল আমেরিকায় আরবী সাহিত্যের একটি সংগঠন। আমেরিকার প্রবাসী আরবীয় সাহিত্যিকগণ এই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠা করেন। সাহিত্য রচনার বিষয়বস্তু এবং পদ্ধতিগত ক্ষেত্রে তারা আমূল পরিবর্তন সাধন করেন। তার সংগঠকদের মধ্যে কয়েকজন বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেন। বিশেষ করে এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ জুবরান খালীল জুবরান ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত সাহিত্যিক।

প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
এই সংগঠনের ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয় ১৯১৬ খৃষ্টাব্দে, কিন্তু তা সরকারী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২০ সালে, নিউইয়র্কে। কয়েকজন নির্বাচিত সাহিত্যিকদের হাত ধরে এর পথ চলা শুরু। মিখাইল নুয়াইমা তাঁর “জীব্‌রান – হ়ায়াতুহু, মাওতুহু, আদাবুহু, ফান্নুহু” নামক বইটিতে লেখেন যে— “এই সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয় দু’টি আলোচনা সভার পর। তার মধ্যে প্রথমটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল আব্দুল মাসীহ আল-হাদ্দাদ-এর বাড়ীতে।” আর হাদ্দাদ ছিলেন নিউইয়র্ক থেকে আরবী ভাষায় প্রকাশিত একটি পত্রিকার সম্পাদক ও পৃষ্ঠপোষক।

প্রথম মিটিংয়ের দিনটি ছিল ২০শে এপ্রিল, ১৯২০। এই মিটিং থেকে যে আলোচনা উঠে এসেছিল তা অত্যন্ত যত্ন সহকারে মিখাইল নুয়াইমা একত্রিত করেন। আলোচনার মূল নির্যাস ছিল— তাঁদের মধ্য থেকে একজন মন্তব্য করলেন যে, প্রবাসী কবিসাহিত্যিকদের একটি সংগঠন থাকা দরকার। যে সংগঠনটি তাঁদের সকলকে একত্রিত করবে। আরবি ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষ সাধনের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রয়াসগুলোকে সংগ্রহ ও সংকলন করে রাখবে।

এই প্রস্তাবটী উপস্থিত বিদগ্ধ সাহিত্যিকদের প্রশংসা ও সমর্থনে সিদ্ধান্তের রূপ পায়। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ক’জন হলেন— জিব্‌রান খালিল জিব্‌রান, নাসীব উরাইজাহ্‌, উইলিয়াম ক্যাটস্ফিলস, রাশীদ আইয়ুব, আব্দুল মাসীহ হাদ্দাদ, নুদরাহ হাদ্দাদ, মিখাইল নুয়াইমাহ, ইলিয়াহ আবু মাযী প্রমুখ।

ওই মাসেরই ২৮ তারিখে দ্বিতীয় তথা চূড়ান্ত মিটিংটি আয়োজিত হয় জিবরান খালিল জিবরানের বাস ভবনে। এখানে প্রথম মিটিংয়ের সদস্যগণ সহ ইলিয়াস আতাউল্লাহ যোগদান করেন। সংগঠনের গৃহীত সিদ্ধান্তের উপর সকলে সহমত পোষন করেন। অন্যান্য সদস্যদের সমর্থনে সভাপতি নিযুক্ত হন জিব্‌রান। মিখাইলকে উপদেষ্টা এবং উইলিয়ামকে কোষ্যাধ্যক্ষ করা হয়। সংগঠনের নিয়মাবলী রচনার দায়িত্ব দেওয়া হয় মিখাইল নুয়াইমাকে। ১৯২০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন ১২ বছর স্বমহিমায় ব্বিরাজ করে। অতঃপর ১৯৩২ সালে সভাপতি জিব্‌রানের মৃত্যুর সাথে অস্তমিত হয়।

সংগঠনের উদ্দেশ্য
এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য ছিল আরবী ভাষার সংরক্ষণ, দীর্ঘকালীন স্থাবরতা থেকে এর মুক্তি, ভাষার বৈশিষ্ট সমূহের উন্নতিকরণ, নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্যতা তৈরী করা, আরবি গদ্য ও পদ্যের নবজাগরণের উন্মেষ ঘটানো ইত্যাদি। তারা গতানুগতিক অন্ধ অনুকরণ ছেড়ে চিন্তাভাবনায় নতুনত্ব নিয়ে আসেন। তবে এসব করতে গিয়ে তারা প্রাচীন সাহিত্যের ধ্যানধারণাকে কোনোভাবেই কোনোরকম অবহেলা করেননি, বরং সেগুলিকে কেন্দ্র করেই তাদের চিন্তাভাবনা আবর্তিত হতো।

সংগঠনের কর্মকান্ড
জীবন সম্বন্ধে ভাবনাচিন্তা, অস্তিত্বের রহস্য, মানব চরিত্রের বোধের গভীরতা, মানব সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গীর উদারতা, আরবদেশ সম্পর্কিত বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ, মত প্রকাশের ক্ষেত্রে ইঙ্গিত ব্যবহারের বাহুল্য- ইত্যাদি দৃষ্টিকোণ থেকে এদের সাহিত্যকর্ম শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল।এর সদস্যরা সম্মিলিত ভাবে এই প্রবাসমুলুকে কয়েকটি আরবী সাময়িকী এবং পত্রিকা প্রকাশ করেন। তার মধ্যে কয়েকটি হলো— (ক) মাজাল্লাতু আল্‌-ফুনূনঃ এর উদ্দেশ্য ছিল নিছক সাহিত্যচর্চা, এর সম্পাদক ছিলেন নাসীব উরাইযাহ। (খ) জারীদাতু আস্‌-সায়েহ়ঃ এর উদ্দেশ্য ছিল প্রবাসী আরবীয়দের অবস্থাকে তুলে ধরা। এর সম্পাদক ছিলেন আব্দুল মাসীহ আল-হাদ্দাদ। (গ) মাজাল্লাতু আস্‌-সামীরঃ ইলিয়া আবু মাযী সম্পাদিত এই পত্রিকার উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকায় আরবী চর্চা। এটা সপ্তাহে পাঁচদিন প্রকাশিত হতো। সংগঠকদের মৃত্যুর পর এর যবনিকা পতন ঘটে।

-আব্দুল মাতিন ওয়াসিম

No comments:

Post a Comment